বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বিতর্ক এখন তুঙ্গে। ইন্টারনেটে জনসাধারণের অবাধ বিচরণ থাকবে না সরকার এটি নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
এ বিষয়টি সামনে রেখে আগামী ৩ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স (ডব্লিউসিআইটি) সম্মেলন।
এ সম্মেলনে আইটিইউ তাদের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেশন্সে (আইটিআর) পরিবর্তন আনতে চায়। এরই মধ্যে সেখানে বেশ কটি পরিবর্তনের সুপারিশও করা হয়েছে। সুপারিশের অন্যতম হলো ইন্টারনেট কি এখনকার মতো স্বাধীনভাবে চলবে, নাকি তার ওপর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে? জাতিসংঘের ১৯৪টি সদস্য দেশের ভোট বলে দেবে ইন্টারনেটে সাধারণের অবাধ বিচরণ থাকবে, কি থাকবে না?
এ উদ্দেশ্য সফলে ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টার এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস’ যৌথভাবে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারস ইনিস্টিটউট মিলনায়তনের (আইইবি) ইঞ্জিনিয়ারস রিক্রিয়েশন সেন্টারে (ইআরসি) মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি ড. সৈয়দ ফয়সাল হাসানের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ।
ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করে ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বার্স (আইকান), ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্কফোর্স (আইইটিএফ), ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনেসোর্টিয়াম (ডব্লিউথ্রিসি) এবং ইন্টারনেট আর্কিটেকচার বোর্ড (আইএডি)। এ সংস্থাগুলোর প্রত্যেকেই মাল্টিস্টেক হোল্ডার এবং উন্মুক্ত।
আইটিইউ চাইছে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তাদের তথা সরকারের হাতে চলে আসুক। ফলে জাতিসংঘের ১৯৪টি সদস্য দেশের ভোট বলে দেবে ইন্টারনেটে সাধারণের অবাধ বিচরণ থাকবে, কি থাকবে না? ভোটের ফলাফল যদি আইটিইউয়ের অনুকুলে যায়, তাহলে প্রত্যেক দেশের সরকারই ঠিক করে দেবে তাদের দেশে কোন সাইট দেখা যাবে আর কোনটি দেখা যাবে না।
এখন যেমন বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি বিশ্বের যেকোনো দেশে গিয়ে ইমেইল, ফেসবুক, টুইটার ব্যবহার করতে পারেন। নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আরোপিত হলে তখন এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ব্যক্তির যে দেশে অবস্থান সেখানকার সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে অনুমতি নিতে হবে।
এদিকে টেলিফোনের মতো রোমিং করে নিলে শুধু তখন ইমেইল বা অন্য সব সেবা বিদেশে গিয়েও পাওয়া যাবে। ইন্টারনেটের কোনো নিয়ন্ত্রক বা স্বত্বাধিকারী নেই বলেই এত দ্রুত এর বিকাশ সম্ভব হয়েছে। এর উন্মুক্ততা ও বিকেন্দ্রীকরণই এর শক্তি।
তাই এ ব্যবস্থায় ব্যতয় হলে ইন্টারনেট ব্যবহার ও সেবা সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখা ও সাধারণ নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্টভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে বাংলাদেশ সরকারকে বর্তমান ব্যবস্থার পক্ষে থাকা উচিত। এ ছাড়া সরকারের উচিত জনগণের মতামত নিয়ে দেশের হয়ে একটি পজেশন পেপার তৈরি করা। এসব কথা জানান ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টারের ড. সৈয়দ ফয়সাল হাসান।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, এমনিতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় যদি সরকারের কাছে আরও ক্ষমতা যায়, তাহলে বিভিন্ন দেশের ইন্টারনেটের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি সমস্যায় পড়বে।
এ ছাড়াও ইন্টারনেটের ওপেন স্ট্যান্ডার্ড এবং মাল্টি স্টেক হোল্ডার ব্যবস্থাপনায়ই মূলত ইন্টারনেট প্রসারের পেছনের শক্তি। এর ব্যতয় হলে ইন্টারনেটের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আইটিইউ উপযুক্ত জায়গা নয়। শুধু বিভিন্ন দেশের সরকার এখানে মতামত দিতে পারে।
এসব সরকারের মধ্যে কেউ কেউ অবাধ এবং স্বাধীন ইন্টারনেট সমর্থন করে না। ফলে বর্তমান নীতিমালার পরিবর্তনের ফলে সেন্সরশিপ বেড়ে যেতে পারে। উদ্ভাবনের পথ অবরুদ্ধ হতে পারে। সরকারগুলো এককভাবে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। বিশ্বের কোটি কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকদের মতামতকেও এখানে গুরুত্ব দিতে হবে।
এ মতবিনিময় সভায় অন্যর সবার মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সহ-সভাপতি সুমন আহমেদ সাবির, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজেএফ) নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন, সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব মিজানুর রহমান, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ ঢাকা চ্যাপ্টারের জেনারেল সেক্রেটারি রবিউল আলম এবং সামহোয়্যারইন ব্লগের প্রধান সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা।
নিউজরুম