রুপসীবাংলা, ঢাকা (০৩ ডিসেম্বর) : নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল মোবারকের অসৌজন্যমূলক ও অসদাচরণের প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিটের সংবাদকর্মীরা সোমবার সংলাপ বর্জন করছেন। সংলাপ বর্জন করে সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর ইসি কার্যালয়ের সামনে।
কমিশন কার্যালয় চত্ত্বরে সকাল ১১টা থেকে এ প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের চলমান সংলাপ শেষে রোববার আব্দুল মোবারক সাংবাদিকদের বেয়াদব, অসভ্য ও মুর্খসহ ব্যবহার অনুপযোগী অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন। তিনি সাংবাদিকদের নির্বাচনী আইন ও সংবিধান না পড়ে তসলিমা নাসরিনের ‘খ’ পড়ার উপদেশ দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদসহ অন্য তিন কমিশনার এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই এ অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন নির্বাচন কমিশনার তাকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদেই সাংবাদিকদের এ অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলছে।
রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সংলাপ ছিল। সংলাপ শেষে পৌনে একটার দিকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সংবিধানের ১২৩ এর ৩ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সিইসির মন্তব্য চাওয়া হয়।
সম্প্রতি ওর্য়াকার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদটির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘সংসদ সদস্য পদে বহাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে না এবং নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না।’’
এ সময় সিইসিও তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘‘এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।’’
রোববারও সিইসি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি মুখ্য বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘জাতি এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’’
সাংবাদিকদের পক্ষে এর সমাধান কিভাবে হবে এবং কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। সিইসি বিষয়টি এড়িয়ে গেলে একজন সাংবাদকর্মী আবারও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।
অপর নির্বাচন কমিশনার মোঃ জাবেদ আলীও এ সময় উত্তেজিত হয়ে উত্থাপিত বিষয়টি জানতে সংবিধানের ১২৩ (খ) অনুচ্ছেদটি ভালো করে পড়ার পরামর্শ দেন।
এরপর ইসি মোবারক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে জাবেদ আলীকে বলেন, ‘‘ওরা সংবিধানের কী বোঝে? ওদেরকে তসলিমার ‘খ’ পড়তে বলেন।’’
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের হুশিয়ার করে বলেন, ‘‘সীমা লঙ্ঘন করবেন না।’’
সাংবাদিকরা সীমা লঙ্ঘন করেননি জানালে তিনি উচ্চারণ অনুপযোগী শব্দ ব্যবহার করে বলেন, ‘‘তাহলে আপনারা যা খুশি লিখুন।’’
এ ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোটার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) তাৎক্ষণিক বৈঠকে ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার কমিশনের চলমান সংলাপ অনুষ্ঠান বর্জন এবং কমিশন কার্যালয় চত্ত্বরে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন।
ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ অবশ্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এই ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক যেন সব সময় বজায় থাকে। সে কামনা আমাদের।’’
নিউজরুম