রুপসীবাংলা, ঢাকা (০১ ডিসেম্বর) :বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ফজলুল হক হলের পুকুরপাড়ে বসে আমরা ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেই।
এই আমরা মানে বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, তার সঙ্গে আরো দশ, সব মিলিয়ে জনা এগারো ছাত্র।
শনিবারসকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের হীরকজয়ন্তীমহোৎসবে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্মৃতির পাতা হাতড়ে তিনি এ তথ্যজানান।
এ সময় সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তাআবদুল হামিদ খান ভাসানী ও আতাউর রহমান খান ১৪৪ ধারা ভাঙার বিরোধী ছিলেনবলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
সে সময়কার ঢাবি ছাত্র জিল্লুর রহমানবলেন, ‘‘১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মওলানাআবদুল হামিদ খান ভাসানী ও আতাউর রহমান খান এ পরিষদের নেতৃত্ব দেন। তারা ১৪৪ধারা ভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। আমরা ১১ জন ছাত্র ছিলাম ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে।২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ফজলুল হক হলের পুকুরপাড়ে বসে আমরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গেরসিদ্ধান্ত নেই। এ সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই নেওয়া হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়খেলার মাঠে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাবির অতীত ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতেছাত্র-শিক্ষক ও গবেষকদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনিবলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষাআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকেবিশ্বমানের স্তরে নিয়ে যাওয়া, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিসহবিভিন্ন কার্যক্রমে অ্যালামনাইদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে।”
জিল্লুররহমান বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যালামনাই, এ আমার অহংকার।আমি আজ এসেছি এই মহামিলন মেলায় আমার দ্বৈত সত্তা নিয়ে। আমি একজন অ্যালামনাইএবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি পরিচয়ের আগে আমিঅ্যালামনাই পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “প্রাচ্যেরঅক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু জ্ঞানী-গুণী জাতীয় ওআন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অবদান রেখে যাচ্ছেন। শিক্ষা প্রসারে এবিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য তা সমুন্নত রাখতে হবে। এজন্য ছাত্র শিক্ষক গবেষকসবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠার পরথেকে ৯০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখেচলেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবোধ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন ওমুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকারয়েছে। জাতীয় সত্তা বিকাশে জ্যোতিষ্কের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবিদ্যাপীঠ। জাতীয় জীবনে রাখছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা। এ বিশ্ববিদ্যালয়কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং গোটা জাতির পথ প্রদর্শক।”
বিশ্ববিদ্যালয়েরইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, “বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ছাড়াও ৫৪-এরযুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষাকমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয়দফা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ’৭০ এরনির্বাচন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অগ্রণী ভূমিকা পালনকরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেবল রাজনীতি নয়- সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ওঐতিহ্য বিকাশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান সর্বজন স্বীকৃত।”
বিশ্ববিদ্যালয়কেআলমা ম্যাটার (মাতৃশিক্ষা) আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এ আলমা ম্যাটারআমাদের অনেক দিয়েছে, আমরা অনেক নিয়েছি। আজ আমরা সমাজের যে যেখানে আছি তারসবই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমাদের অনেক ঋণ।”
অ্যালামনাইঅ্যাসোসিয়েশন, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকার- এ তিন শক্তির সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যালামনাইকে বিশ্বসভায় ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে সকাল পৌনে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি। গুটিকয়েকট পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানউদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিনসিদ্দিক ও বয়োজ্যেষ্ঠ অ্যালামনাই মিসবাউল চৌধুরী।
উদ্বোধনীবক্তৃতায় উপাচার্য বলেন, ‘‘ ৯১ বছরের বেশি সময় ধরে ভাষা আন্দোলন ওগণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ দেশের সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, দেশীয় রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সামাজিকতার মূলজায়গায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই। এরই ধারাবহিকতায়মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ওকর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবন দিয়েছেন। তাই জাতিকে নেতৃত্ব দিতে এবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকেই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।” এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।
নিউজরুম