রুপসীবাংলা,ঢাকা (০১ ডিসেম্বর) :প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে ১ ডিসেম্বর বিশ্বএইডস দিবস পালন করা হচ্ছে। ‘এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডসে মৃত্যু : নয় একটিও নয়আর। বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ব সবাই, এই আমাদের অঙ্গীকার’—স্লোগান নিয়ে শনিবারপালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব এইডস দিবস ২০১২’।
এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়েবিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে।
বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা কমলেওবাংলাদেশসহ এশিয়ার চারটি দেশে বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যাএক হাজার ১০১ জন। সেই সঙ্গে বাড়ছে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। চলতিবছরেও এইচআইভি আক্রান্ত ও এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জাতীয় এইডস/এসটিডিপ্রোগ্রাম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিত্সা ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
সরকারিপরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্তএক বছরে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৪ জন মারা গেছেন। একইসঙ্গে বেড়েছে এইডসএবং এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যাও। গত বছর নতুন করে ৪৪৫ জনের রক্তে এইচআইভিপাওয়া যায়। আর এইডসে আক্রান্ত হয় ২৪১ জন।
২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকেশুরু করে ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ভাইরাস পজিটিভ নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল৩৪৩ জন। আর ২৩১ জন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছিল। ২০১০ সালেএইডসে মারা যায় ৩৭ জন। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০০৯ সালে শনাক্ত হওয়া এইচআইভিপজিটিভ সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। ওই বছর ১৪৩ এইডস রোগীকেও শনাক্ত করা হয়।
সরকারিহিসাবে বাংলাদেশে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরসংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৩৩ জনে। এর মধ্যে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন একহাজার ১০১ জন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে মারা গেছেন ৩২৫ জন।
বিশেষজ্ঞরাবলছেন, এইডস একটি মারাত্মক রোগ হিসেবে বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।এইডস সর্বপ্রথম ১৯৮১ সালে আমেরিকায় ধরা পড়ে। ১৯৮৫ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্ত এইচআইভি জীবাণুমুক্ত কিনা পরীক্ষা করেনিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল রক্ত সরবরাহ করার পরামর্শ দেয়।
এইডস রোগেরবাহক হলো অতিক্ষুদ্র এক বিশেষ ধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাস দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সেলকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে মানবদেহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহারিয়ে ফেলে। এই এইডস ভাইরাসকেই হিউম্যান ইমিউনোডেফিয়েন্সি ভাইরাস বাএইচআইভি বলা হয়। এইচআইভি সংক্রমণের সর্বশেষ পর্যায় হলো এইডস।
বিশেষজ্ঞরাআরও বলেন, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণ, তার ব্যবহার করাসিরিঞ্জ বা সুই ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির রেজার, ব্লেড বা ক্ষুরজীবাণুমুক্ত না করে আবার ব্যবহার ও আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ (কনডমব্যবহার না করে) শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুললে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাদেখা দেয়।
এমনকি এইচআইভিতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের নবজাতকেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষ দিকে বা প্রসবের সময় হতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীঅধ্যাপক ডা. রুহুল হক বলেন, এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধে বাংলাদেশ এ পর্যন্তঅত্যন্ত সচেতনতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং দেশে এইচআইভি-এইডস পরিস্থিতিঅত্যন্ত সন্তোষজনক।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ীপৃথিবীর সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ বর্তমানে এইডসবাহী জীবাণু এইচআইভিদ্বারা আক্রান্ত। যে হারে বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আশঙ্কা করাহচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে এইডস রোগীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
২০০৭সালের জরিপ অনুযায়ী এইডসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে আনুমানিক ৩৩ দশমিক ২মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। যার মধ্যে তিন লাখ ৩০ হাজার শিশু। যে কোনোবয়সী নারীদের চেয়ে ১৫ থেকে ২৪ বছরের নারীদের মধ্যে অন্য এইচআইভি সংক্রমণেরঝুঁকি আট গুণ বেশি।
ইউএনএইডসের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভিআক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে আনুমানিক ১১ হাজার। এদিকে বিভিন্ন বেসরকারিসংস্থার দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভি পজিটিভ মানুষ, এইডস রোগীএবং এইডসজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। কয়েক হাজার মানুষ নিজের অজান্তেএইচআইভি জীবাণু বহন করছে এবং অন্যদের শরীরে ছড়াচ্ছে।
এদিকে দেশেসরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা এ দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও পথযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
নিউজরুম