এস এম জহিরুল ইসলাম
সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের আন্দোলন কর্মসূচি চলছে অব্যাহতভাবে। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের প্রতিকার এবং এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য সাংবাদিক নেতারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে সাথে বারবার বৈঠক করছেন। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। বরং ল করা যাচ্ছে, সাংবাদিক নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন যতই গতিশীল ও তীব্রতর হচ্ছে, মনে হয় সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতন আরো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মহান স্বাধীনতা, বিজয় অথবা ভাষা আন্দোলনের মাসেও সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হত্যা-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বারবার। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে সাংবাদিক নির্যাতনের খবর। অতি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সাংবাদিক নির্যাতন হয়েছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। জামালপুরে একজন জনপ্রতিনিধির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী, রূপগঞ্জে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সেখানকার পেশাদার ১০ জন সাংবাদিকের হাতের কব্জি কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছে। ইসলামি সমমনা দলের হরতাল চলাকালে মিরপুরে একজন সংবাদকর্মীকে পুলিশ আটক করে। ঢাকার একজন সিনিয়র সাংবাদিক আকতার সিরাজীকে পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। সারা দেশে এসব সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ নির্বাক ও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ২০১০ সালে বরিশাল জেলার মুলাদী থানার সামনেই সন্ত্রাসীদের আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন স্থানীয় প্রেস কাবের সভাপতি মনির হোসেন রাড়ী। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও আজো তার বিচার হয়নি। খুনিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে বীরদর্পে ঘুরছে। যে কারণে নিহত মনিরের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কিছু দিন আগে দিগন্ত টেলিভিশন অফিসের সামনে অযথাই সাংবাদিকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে পুলিশ। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তৃপ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু এ ঘটনা নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল, অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ-র্যাবের সামনে সাংবাদিক নির্যাতিত হয়ে আসছে। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে গণমাধ্যমের গাড়ি, ভাঙচুর করা হচ্ছে ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরা। এসব েেত্র অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। স্বাধীনতার পরে এ যাবৎ যত সাংবাদিক হত্যা অথবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কোনো ঘটনারই যথাযথ বিচার হয়নি। সাধারণ মানুষের মনে একই প্রশ্নÑ সাংবাদিক নির্যাতন কি আদৌ বন্ধ হবে? বর্তমান সরকারের সময়ে যেসব সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য রহস্যজনক। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন যত দিন সাগর-রুনির হত্যাকারীরা ধরা না পড়বে, তত দিন তিনি চোখের জলে অফিস করবেন। আসলে তথ্যমন্ত্রী মহোদয় কি এখনো চোখের জলে অফিস করছেনÑ এ প্রশ্ন এখন সারা দেশের সাংবাদিকসমাজের। প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই সত্য প্রকাশে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দৈনিক আমার দেশ। এ কারণে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর মাহমুদুর রহমানকে সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে রিমান্ড, জেলজুলুম, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। পত্রিকাটির প্রকাশনাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তার পরও আমার দেশ থেমে থাকেনি। বর্তমানে একটি সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে আবার আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকসহ পত্রিকাটির সাংবাদিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রামুর মন্দির ভাঙচুর ঘটনায়ও একজন সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আসলে একটার পর একটা সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়ায় পেশাদার সাংবাদিকেরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তবে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামীণ জনপদে কর্মরত সাংবাদিক সমাজ। লণীয় বিষয় যে, শহরের চেয়ে মফস্বলেই সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বেশি হয়। সাংবাদিক সমাজ তাদের পেশাগত মানোন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা, হত্যা, নির্যাতন বন্ধে অব্যাহত আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও কোনোটাই বন্ধ হয়নি। সারা দেশে এ নির্যাতন বন্ধ করতে হলে শুধু সাংবাদিকেরা আন্দোলন-সংগ্রাম করলে সরকারের টনক নড়বে না; সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সামাজিকভাবে জনসচেতনতা ও জনমত গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে হবে। সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সাংবাদিকসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাদের অধীনস্থ সবাইকে যথাযথ দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হতে পারে।