স্পোর্টস ডেস্ক(৩১ডিসেম্বর): পাকিস্তান সফর নিয়ে প্রচণ্ড চাপে বিসিবি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও দ্বিতীয়বারের মতো সফরে না গেলে এর যে ভয়াবহ জের টানতে হবেÑ সে দুশ্চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম। এমনিতেই গৃহবন্দী হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ভারত তো এখনো টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে আমন্ত্রণই জানায়নি। এরপর টেস্ট প্লেয়িং বড় দলগুলো (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ) একে একে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এমনি মুহূর্তে পাকিস্তানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার কষ্ট কী, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তারা। কিন্তু উপায়ও নেই। পাকিস্তান সফরে নিরাপদ মনে করছে না বিসিবি। যদিও পিসিবির নিরাপত্তা প্লান পেয়েছে। আইসিসি থেকেও একটা নো অবজেকশন হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ সময়ে পাকিস্তান সফর নিরাপদ ভাবছেন না অনেকেই। সেটাই আমলে নিয়ে এখন আমতা আমতা করছে বিসিবি। কিন্তু ‘না’ বলার উপলক্ষ খুঁজে পাচ্ছে না তারা। কারণ ‘না’ বলার সাথে সাথে পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেটের দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে তো যাবেই, এর সাথে সাথে আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া বিপিএলে পাকিস্তানের একঝাঁক ক্রিকেটারের খেলার জন্য ইতোমধ্যে নিলামে দলভুক্ত করেছে সাত ফ্রাঞ্চাইজি, তাও পড়বে হুমকির মধ্যে। কারণ সফরে না গেলে বিপিএলে ক্রিকেটার দেবে না তারা, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। এতে আকর্ষণ শেষ হয়ে যাবে বিপিএলের। তা ছাড়া কোনো ত্রিদেশী টুর্নামেন্ট বা টেস্ট কিংবা ওয়ানডে সিরিজেও আর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না পাকিস্তানকে। এ অবস্থায় কী করবে বিসিবি তা–ই ভেবে অস্থির।
বিসিবি চলছে এখন আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। একটি নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওই আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতির ছেলেও তিনি। প্রধানমন্ত্রীর খুবই স্নেহভাজনও। এমন ক্ষমতাধর হয়েও কেন সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি সেটার কারণ বোঝা যাচ্ছে না। জানা গেছে, জাতীয় দলের ক্রিকেটারেরা পাকিস্তান সফরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, নিরাপত্তা থাকলে আর বিসিবি পাঠালে তারা যাবেন। কিন্তু এর পাশাপাশি একটা কথাও বলে রেখেছেন তারা। তা হলো বিসিবির সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ক্রিকেটারদের পরিবার–পরিজনেরা এ সফর নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেউ কেউ বিসিবির আহ্বায়ক কমিটির কাউকে কাউকে ফোন করে পাকিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ক্রিকেটারদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিমত দিয়েছেন। এতে দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে তাদের। এটিও ঠিক শুরু থেকেই বিসিবি দোদুল্যমান ছিল। যেতেই হবে, এমন দৃঢ়তা থাকলে এসব কথার অবকাশ থাকত না। একবার যাব আবার যাব না। আবার দেখি, অমুক হলে তমুক। এসব কথায় জটিলতা আরো বেড়েছে। এর আগেও একবার সব চূড়ান্ত হওয়ার পর হাইকোর্টে এক রিটে ওই সফর বাতিল হয়ে গেছে। সেটা নিয়েও প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল পিসিবির। এবার এখনো কেউ রিট করেননি এবং এ শিডিউল (একটি ওয়ানডে ও একটি টি–২০) কিন্তু বিসিবি নিজ থেকেই চেয়েছে পিসিবির কাছে। একটা প্রস্তাবিত শিডিউল মোতাবেক ১২ ও ১৩ জানুয়ারি হওয়ার কথা ওই ম্যাচ। এখন সেটা আবার না করে দিলে কী হবে সম্পর্ক, সেটার রেশ বোঝার চেষ্টা করছেন। যদি বিপিএল কাছাকাছি না হতো, তাহলে হয়তো না–ই করে দিত তারা। কিন্তু বিপিএল পানসে হবে এ জন্যই এখন উপায় খুঁজছে তারা ভিন্ন কিছুর।
এ দিকে আজ বিসিবির আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিসিবির বিতর্কিত গঠনতন্ত্র ছাড়াও পাকিস্তানের এ সফর প্রসঙ্গেও আলোচনা হতে পারে এই মতবিনিময়ে।
নিউজরুম