বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা আবারো বলেছেন, অর্থবহ নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বদলীয় অংশগ্রহণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মজিনা উল্লেখ করেছেন, ‘গণতন্ত্রের মূল শক্তি হচ্ছে ভোট। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সে কারণে নির্বাচনে সর্বদলীয় অংশগ্রহণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর নির্বাচন অর্থবহ করতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্য নতুন নয়। তিনি বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এ কথাও তিনি বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বিঘিœত হতে পারে। এমনকি নির্বাচন বিলম্বিত হয়ে ২০০৭ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। শুধু মার্কিন রাষ্ট্রদূত নন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা বাংলাদেশ সফরে এসেছেন তারাও একই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করে না বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী কূটনৈতিক অংশীদার দেশটি। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারাও একই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলও স্বচ্ছ, অবাধ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে বিরোধীপক্ষের সাথে সংলাপ, সমঝোতা ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও বাংলাদেশ সফরের সময় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা বলেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের ঘটনাপরম্পরা যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক সমঝোতা বা সংলাপের মাধ্যমে অচলাবস্থা নিরসনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারপক্ষ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার ব্যাপারে আন্তরিক কি না তা নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি প্রবণতা দেখা যায় যে, তারা ক্ষমতায় থাকতেই পরেরবারের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণেই ২০০৭ সালের জানুয়ারির নির্বাচন সময়মতো না হয়ে এক অস্বাভাবিক জরুরি সরকার বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসেছিল। বর্তমান সরকার সেই একই পথে হাঁটতে গিয়ে সংবিধান থেকে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাই তুলে দিয়েছে। আবার ক্ষমতায় আসার জন্য জনগণের মন জয় করার পরিবর্তে বাঁকা পথে ক্ষমতায় যাওয়ার এই উদ্যোগ কারো জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। এটি দেশের জন্য তো নয়ই, এমনকি ক্ষমতাসীনদের জন্যও যে কল্যাণ বয়ে আনবে না সেই উপলব্ধি ক্ষমতাসীনদের কেন জানি হচ্ছে না।
আমরা মনে করি, আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বলছেন বলেই নয়, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থেই এমন কোনো নির্বাচনের দিকে ক্ষমতাসীনদের অগ্রসর হওয়া উচিত হবে না যাতে সব দল অংশ নেবে না। আর এর পরিণামে দেশে রক্তারক্তি ও গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হবে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের উচিত হবে বিরোধীপক্ষের সাথে আলোচনায় বসে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর এ জন্য যে অবয়বেই হোক না কেন, একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।