ঢাকা (৩০ ডিসেম্বর) : গণধর্ষণজনিত বিভৎস নির্যাতনে মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ভারত সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে পাকিস্তানের তালেবান বিরোধী সাহসী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। তার মতে, ভারত সরকার আর ওই তরুণীকে গণধর্ষণকারীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। গণধর্ষণপীড়িত ওই সাহসী তরুণী টানা ২ সপ্তাহ মরণযন্ত্রণা ভোগ করে গত শনিবার ভোরে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কিশোরী মালালা বলে, ধর্ষকরাও তাকে ছুড়ে ফেলেছে, ভারত সরকারও তাকে ছুড়ে ফেলেছে।
প্রসঙ্গত, দিল্লির পৈশাচিক ঘটনার শিকার ওই তরুণীর মরদেহ রোববার ভোররাতে সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার চার্টার্ড প্লেনে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী। এরপর দ্রুত মরদেহ নিহতের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ভারতজুড়ে চলমান চাপা ক্ষোভের মাঝে খুব দ্রুতই সৎকার করা হয়।
এদিকে, পাকিস্তান জুড়ে প্রবল প্রতাপশালী জঙ্গি সংগঠন তালেবান শক্তির বিরুদ্ধে নৈতিক লড়াইয়ে রুখে দাঁড়ানো স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মালালা টুইটারে দেওয়া এ সংক্রান্ত এক মন্তব্যে ভিকটিমকে দিল্লির হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুর স্থানান্তরের কড়া সমালোচনা করেছে। ১৫ বছর বয়সী মালালা টুইট করে— ধর্ষকরা ওই তরুণীকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছে আর ভারত সরকার তোকে ছুড়ে ফেলেছে সিঙ্গাপুরে। এ দু’য়ে কোনো পার্থক্য আছে কি?
প্রসঙ্গত, ধর্ষণপীড়িত ওই তরুণীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লি থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো নিয়ে শুরু থেকেই তুমুল বিতর্ক চলছে ভারত জুড়ে। দিল্লির সফদর জং হাসাপাতাল, যেখানে তার চিকিৎসা চলছিল, সেই হাসপাতালের চিকিসৎকরা মিডিয়াকর্মীদের বলেছেন, ধর্ষণপীড়িতকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সিদ্ধান্ত তাদের দেওয়া কোনো ‘মেডিকেল ডিসিশন’ ছিল না বরঞ্চ এটি ছিল ওপরের (সরকার) নির্দেশ। চিকিৎসকরা আরো জানান, ভিকটিমকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর প্রায় ২২ ঘণ্টা আগেই তার ব্রেন ড্যামেজ হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে তার ব্রেন ড্যামেজের ঘটনা ঘটে এবং তার দু’বার হার্ট অ্যাটাকও হয়।
তারা আরো বলেন, হার্ট অ্যাটাকের পর বৈদ্যুতিক শক দিয়ে তার হার্টবিট ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু এর ফলে তার মস্তিষ্কে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় নিউরোলজিস্টদের পরামর্শও নেওয়া হয়।
সফদর জং হাসপাতালের চিকিৎসকরা আরো জানান, ওই সংকটজনক অবস্থায় রোগীর কোনো ধরণের অঙ্গ প্রতিস্থাপন অসম্ভব।
কিন্তু সূত্র মোতাবেক, সিঙ্গাপুরে ওই তরুণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। সূত্র আরো জানায়, সংকটাপন্ন ওই তরুণীর সিঙ্গাপুর সফরজনিত ঝক্কি মোকাবেলায় হৃৎস্পন্দন চালু রাখতে বিশেষ ধরনের ঔষধও প্রয়োগ করা হয় তার ওপর।
অপরদিকে, রোববার ভোরে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে দ্রুতই মরদেহ একটি প্রাইভেট হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে মহাবীর এনক্লেভ এলাকার বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে ধর্মীয় আচার পালন শেষে মরদেহ দ্বারকা২৪ সেক্টর এলাকার শবদাহ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। এসময় শবদাহ কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকা দিল্লি পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়। এমনকি সাংবাদিকদেরকেও দাহকেন্দ্রের আশপাশে যেতে দেওয়া হয়নি।
এ অবস্থায় অল্পক্ষণেই দাহকর্ম সমাধা করা হয়। দাহকালে শ্মশাণঘাটে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরপিএন সিংহ, পশ্চিম দিল্লির সাংসদ মহাবল মিশ্র, দিল্লি বিজেপি প্রধান বিজেন্দ্র গুপ্তাসহ দিল্লি পুলিশের ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তারা।
উল্লেখ্য, সমগ্র ভারতকে জাগিয়ে দিয়ে নিজে অন্তিম ঘুমের রাজ্যে চলে যাওয়া ওই তরুণীর মরদেহ রোববার ভোররাত সাড়ে ৩টার সময় ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। এসময় সেখানে উপস্থিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী নিহতের পরিবার-পরিজনকে সমবেদনা ও গভীর শোক জানান।