এডিবির ১৫ কোটি ডলার ঋণ পেতে মরিয়া সরকার

0
502
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (৩০ ডিসেম্বর) : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ১৫ কোটি ডলার ঋণ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। এ ঋণ পেতে হলে সরকারকে ১৫ শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলোর প্রায় সবই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজার সম্পর্কিত। শর্তগুলো পূরণের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ১২ মাস। এরই মধ্যে সব শর্ত পূরণ করতে না পারলে এ ঋণ পাওয়া যাবে না। তবে শর্তগুলো পূরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ ঋণের এই অর্থ বাজেট বাস্তবায়ন কাজে লাগানো হবে। আগামীকাল সোমবার শর্ত পূরণের অগ্রগতি দেখার জন্য আয়োজন করা হয়েছে একটি সভার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সভাপতিত্বে এটি অনুষ্ঠিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পুঁজিবাজার উন্নয়নে এডিবি সাথে সরকার ৩০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। ঋণের ১৫ কোটি ডলার গত মাসে এডিবির পক্ষ থেকে ছাড় করা হয়েছে। এখন বাকি ১৫ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য সরকারকে ১৫টি শর্ত দিয়েছে ম্যানিলা-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী এই সংস্থা। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত করতে এ সময়ের মধ্যে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ সংশোধনের জন্য সংসদে উত্থাপন করতে হবে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কী পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবে, তার একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। শেয়ারবাজারে আসতে চাচ্ছে এমন কোম্পানির আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) ওপর থেকে তিন শতাংশ আয়কর মওকুফ করতে হবে।

শর্ত পরিপালনের মধ্যে আরো রয়েছে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে। বিএসইসিতে (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) চিফ অ্যাকাউন্টেন্টের পদ সৃষ্টি করতে হবে। শেয়ারমার্কেট সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালকদের শেয়ার ১০ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। আইসিবির ওপেন মিউচুয়াল ফান্ডে প্রচলিত কর অব্যাহতি সবাইকে দিতে হবে এবং তিন বছর মেয়াদে এসব সংস্কারকার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

এডিবির বেশ কয়েকটি আইন ও বিধি সংশোধনেরও শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন সংশোধন, এসইসি আইন ১৯৯৩-এর সংশোধন, এসইসি অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯ সংশোধন, স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯ সংশোধন, আয়কর আইন ১৯৯৪ সংশোধন, এক্সচেঞ্জ কমিশন মিউচুয়াল রুলস-২০০১ সংশোধন ও মার্জিন রুলস সংশোধন করা।

এ ছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট এবং ডি-মিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট নামে দু’টি আইন করারও প্রস্তাব দিয়েছে এডিবি। এরই মধ্যে ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের কাজ চলছে। এ ছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রণয়নেরও কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পুঁজিবাজার উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে এডিবির একটি মিশন গত ২৪ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে। ওই সময় মিশনটি তাদের কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বীমা উন্নয়ন কর্তৃপ, এসইসি, ডিএসই, সিডিবিএল ছাড়াও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফএর সাথে আলোচনা করে। আলোচনায় এডিবির প্রতিনিধিরা জানান, কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিকভাবে সমতা লাভ করবে এবং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে। এডিবি বলেছে, তারা মূলত দু’টি উদ্দেশ্য সামনে রেখে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নীতিগত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে চলমান অস্থিরতার মধ্যে কিভাবে বাজার স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করা যায়; অন্যটি হচ্ছে কিভাবে পুঁজিবাজারকে আরো কার্যকর করে এটিকে প্রবৃদ্ধি সহায়ক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার করা যায়। তারা বাজারে স্থিতিশীলতা অর্জনে এসইসির বিধি ও নীতি সংস্কার চায়।

ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, তারা আশা করছেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এডিবির শর্ত পরিপালন করা সম্ভব হবে। এসব শর্ত বাস্তবায়নের বর্তমান কী অবস্থা, তা অর্থমন্ত্রীকে জানানোর জন্যই আগামীকালের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

 

শেয়ার করুন