ঢাকা (৩০ ডিসেম্বর) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেছেন, এ সরকার বিরোধী নেতাদের গুম, খুন করে গণতন্ত্রকে রক্তাক্ত করেছে। তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সংবিধানকে তছনছ করে দিয়েছে। তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেশকে আর নৈরাজ্য ও অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে না দিয়ে তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিন।’
গতকাল সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবি ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, এই সরকার মনে করেছে বিরোধীদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। এ জন্য তারা বিরোধী নেতাদের কণ্ঠরোধ করতে নির্যাতন, গুম, খুনের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, এম ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। অত্যাচার ও গুমের জন্য গণতন্ত্র আজ রক্তাক্ত। মানবাধিকার আজ শিকলে বাঁধা। নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে এ সরকার সংবিধান তছনছ করে দিয়েছে। সংবিধান এখন নিজেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচার প্রার্থী হয়েছে।
বিএনপির সমন্বয়ক বলেন, ‘সরকারকে বলব দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ও অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে না দিয়ে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি মেনে নেয়ার পদক্ষেপ নিন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে মিছিল-পূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল প্রমুখ।
তরিকুল ইসলাম বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মানুষের ওপর নির্যাতন শুরু করে। আওয়ামী লীগও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই সরকার বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করছে।
বিএনপির সমন্বয়ক আরো বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইয়াহিয়া খানও বাংলার মানুষের ওপর এভাবে অত্যাচার করেছে। আর এ অত্যাচারের কারণেই স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছে। বর্তমান সরকার যেভাবে জুলুম-পীড়ন চালাচ্ছে তাতে তাদেরও পতন ত্বরান্বিত হবে।
সমাবেশ শেষে তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিাক্ষো
ভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, শান্তিনগর, বিজয়নগর, মালিবাগ হয়ে মৌচাক গিয়ে শেষ হয়।
কৃষক দলের আলোচনা সভা : গতকাল বিকেলে মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম।
তরিকুল ইসলাম বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলেই সরকার বলছে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কথায় কথায় বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে চায়। কিন্তু মতা আপনাদের হাতে। তাহলে আপনাদের বিচার করতে মানা করেছে কে?
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির সহদফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
তরিকুল ইসলাম বলেন, জাসদ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ চায়নি। আমার বক্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে শহীদ মিনারে ফাঁসিতে ঝুলব।’
তরিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের কাছে আ স ম আব্দুর রবের এই বক্তব্যের জবাব দেয়ার আহ্বান জানান। বিএনপির সমন্বয়ক আরো বলেন, এ সরকার চাপাবাজিতে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এর জবাব তারা দিতে পারবে না।
তরিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোনো কাজ না করে সব কিছুতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথ বলে। তিনি বলেন, যদি এমন হতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে ফুরফুরে গণতন্ত্র আসবে। সব মানুষের নিরাপত্তা হবে। বিদ্যুতের দাম কমে যাবে। ব্যাংকে চুরি হবে না। দুধ আর মধুতে দেশ ভেসে যাবে। তাহলে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে বলছি, বিএনপিসহ আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই চাই, চাই, চাই। কিন্তু তা হতে হবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামুক্ত সত্যিকারের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু বিচার। তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এক বিচিত্র অদ্ভুত দেশে বাস করছি।
যেখানে মির্জা ফখরুলের মতো নেতাকে ময়লার গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেফতার করে রাখা হয়। মাহমুদুর রহমান ও রিজভীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু বিকাশের মতো অপরাধীদের ছেড়ে দেয়া হয়। বিএনপি নেতা বলেন, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইস্পাতকঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ত্বরান্বিত করি।
নিউজরুম