প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরে শিশুশিক্ষার্থীদের সাফল্য জোর দিতে হবে মানের ব্যাপারেও

0
237
Print Friendly, PDF & Email
তারিখ: ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

 

প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরে চালু হওয়া পাবলিক পরীক্ষার চতুর্থ ও তৃতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীরা ফলাফলে ভালো সাফল্য দেখিয়েছে। দুই স্তরের শিক্ষার্থীরাই তাদের ফলাফলে আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ফলাফলের সব ক’টি সূচক ছিল এবার ঊর্ধ্বমুখী। প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমতে শুরু করেছে। পরীক্ষায় পাসের হার প্রতি বছরই বাড়ছে। প্রাথমিকে গত বছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে পাসের হার। জিপিএ ৫ বেড়েছে লক্ষাধিক। মাধ্যমিকে এবার জেএসসি-জেডিসিতে সম্মিলিতভাবে পাসের হার ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। আর জিপিএ ৫ পাওয়া শিার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজারের বেশি। এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, বিপরীতে শূন্য পাস বা কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা এবং অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর কমছে।

 

প্রাথমিক ও জুনিয়র স্তরে দুই ধারার পরীক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীসংখ্যা বেশি গত শিক্ষাবর্ষ থেকে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেয়েরা সংখ্যায় বেশি হলেও ফলাফল বিচারে এখনো ছেলেদের ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। জিপিএ ৫-এ এখন পর্যন্ত ছেলেরা সংখ্যায় বেশি। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী এবং নিম্নমাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল সার্টিফিকেটের (জেএসসি-জেডিসি) দুই ধারায় বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক পরীক্ষা চালুর যৌক্তিকতা এবার প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এ পরীক্ষা নিয়ে আগ্রহ ও প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ ও মনোযোগের বিস্তৃতি ঘটেছে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত।

 

প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে একসময় বিতর্ক উঠেছিল। গত চারটি পরীক্ষায় বিষয়টি মোটামুটি স্থিতি পেয়েছে। প্রথম দিকে পরীক্ষা অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল তা-ও পর্যায়ক্রমে কাটানো সম্ভব হচ্ছে। নতুন পদ্ধতি শুরু হওয়ার পর থেকে অতি উদারভাবে খাতা দেখার পরও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়ে ঝরে পড়েছিল। এবার ঝরে পড়ার হার কিছুটা কমেছে। পৃথক বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে ফলাফলের ভিত্তিতে বৃত্তির সিদ্ধান্তও ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে। একই সাথে পরবর্তী স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রেও এসব ফলাফলকে ভিত্তি ধরা হলে উভয় পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ ও গুরুত্ব আরো বাড়বে। তবে এ ব্যাপারে আগে থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হলে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে মেডিক্যালে ভর্তির ঘোষণা নিয়ে যে বিপত্তি ঘটেছে, সেটি হবে না।

 

প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক দু’টি স্তরই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভিত গড়ার পর্যায়। এ পর্যায়ে কোনো শিক্ষার্থীর ঝরে যাওয়া যেমন কাম্য নয় তেমনিভাবে ভালো ফলের সার্টিফিকেট পাওয়ার পরও যদি শিক্ষার্থীর মান একেবারে কাঁচা থেকে যায়, সেটিও গ্রহণযোগ্য হবে না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মান বিবেচনায় তাদের সনদের পাশাপাশি প্রকৃত শিক্ষা কতটুকু অর্জন করেছে, সেটির মূল্যায়নও প্রয়োজন। এটি কেবল নিশ্চিত করতে পারে স্কুলে ভালো শিক্ষক, ভালো পরিবেশ এবং শিক্ষার ভালো মূল্যায়ন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পায় না। এবারের ফলাফলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক কোনো পর্বেই শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় গ্রামের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

আমরা মনে করি, প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক উভয় স্তরে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব শিক্ষা-সুযোগের বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হবে শিক্ষার অবকাঠামোকে গ্রামপর্যায়ে ভালোভাবে পৌঁছানো এবং শিক্ষক নিয়োগে দলীয় প্রভাবের পরিবর্তে তাদের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই দল-মত-বর্ণ বিবেচ্য হওয়া কাম্য নয়

শেয়ার করুন