ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তির ক্ষেত্রে ১০টি বিভাগে কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত শর্ত উচ্চ আদালত স্থগিত করে দিয়েছেন। তবুও এসব বিভাগে মাদরাসাশিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছেন না। তাদের মধ্যে যারা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তারা সিরিয়ালে প্রথম দিকে থাকলেও ভালো বিভাগগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাননি। এ অবস্থায় অনেকেই বঞ্চনার শিকার হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে এ প্রসঙ্গে আরো জানানো হয়, ২০১২-১৩ সেশনে ভর্তির নির্দেশনায় ১০টি বিভাগের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি কিংবা সমমানের পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ২০০ নম্বরের কোর্স করার অতিরিক্ত শর্ত দেয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তিন মাসের জন্য। ঢাবি ভর্তি নির্দেশিকায় অর্থনীতি ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ দু’টিতে ভর্তি হতে ‘ইসলামি অর্থনীতি’ গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানানো হয়েছে। এর ওপরও রয়েছে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা। আদালত ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারসহ ভর্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বলেছেন। কিন্তু এ সব কিছু উপেক্ষা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুধু মাদরাসাপড়–য়াদের বেলায় অতিরিক্ত শর্তারোপকে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে একজন ছাত্রীর মায়ের মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা অন্য সবার মতো ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চায়। তাদের জন্য আলাদা শর্ত থাকবে কেন? সবারই উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পাওয়া উচিত।’ কেন আদালতের রায় অগ্রাহ্য করা হচ্ছে প্রথম বর্ষে মাদরাসাশিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে, সে ব্যাপারে ঢাবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক পাঁচটি প্রয়োজনের একটি। শিক্ষালাভের সুযোগ পাওয়া নিছক ভাগ্যের ব্যাপার নয়; এটা প্রতিটি নাগরিকের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এবং সভ্যসমাজে এ ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা যায় না। আমাদের সংবিধানেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম পাদপীঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই অবাঞ্ছিত বৈষম্য সৃষ্টি করেছে মাদরাসাশিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এমনকি এ প্রসঙ্গে আদালতের সুস্পষ্ট রায়ের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের মতোই অভিন্ন প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে একই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এবং তাতে উত্তীর্ণ হয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। তাদের অনেকে অতীতে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে অধ্যয়ন করেছেন এবং প্রখর মেধার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। তবুও তাদের ভর্তিবঞ্চনা অব্যাহত থাকার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। আমরা আশা করি, অন্তত আদালতের নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাদরাসাশিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পদক্ষেপ নেবে।