স্পোর্টস ডেস্ক(২৯ডিসেম্বর):উইকেটে নেমেই সামনে পেলেন সাত ফুটি এক ‘দৈত্য’—মোহাম্মদ ইরফান। দ্বিতীয় বলেই বাউন্সার দিয়ে স্বাগত জানানো হলো। কোনোমতে সামলালেন। তৃতীয় বলটা অমন উচ্চতা থেকে ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসা ইয়র্কার। গিয়ে লাগল ঠিক বুটের মাঝখানে। যুবরাজ সিং আক্ষরিক অর্থেই ধরাশায়ী। মাটিতে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। ফিজিও ছুটে আসতেই যেভাবে মাথা ঝাঁকালেন, মনে হলো, ব্যাটিংয়ের এখানেই সমাপ্তি। রানের খাতা খোলার আগেই!
কিন্তু তিনি যুবরাজ। মৃত্যুকেও জয় করে এসেছেন হেলায়। ক্যানসার তাঁকে কাবু করতে পারেনি। সামান্য ব্যথা? ব্যাটিং করতে এসেই যে ব্যথা পেয়েছিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা পাকিস্তানি বোলারদের ফিরিয়ে দিতে শুরু করলেন। শরীরের ব্যথা ম্যাজিক সেপ্র দিয়ে উধাও করা যায়, যুবরাজের আঘাতের ব্যথা পাকিস্তান ভুলবে কী করে! শেষ পর্যন্ত তাঁর ৩৬ বলে খেলা ক্যারিয়ার–সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংসটাই ব্যবধান গড়ে দিল। দ্বিতীয় ম্যাচটা ১১ রানে জিতে সিরিজটা ১–১ করে ফেলল ভারত। সিরিজের শুরুর ছবিটা মিলে গেল শেষেও—দুই অধিনায়কের হাতেই শোভা পেল ট্রফি। ‘সৌহার্দ্যে’র সিরিজ বলে কথা।
মৃত্যুদুয়ার থেকে ফিরেছেন। এই ম্যাচের আগেই একটা টি–টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে এই আহমেদাবাদেই খেলেছেন ৭৪ রানের একটা ইনিংস। কিন্তু কোথাও যেন আসল যুবরাজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। টেস্ট দল থেকে বাদও পড়তে হয়েছে। অবশেষে সত্যিকারের যুবরাজের পুনর্জন্ম হলো কাল। ২০০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে চার মেরে শক্তির খুব বেশি অপচয় করতে রাজি ছিলেন না। ছক্কাতেই ছিলেন বেশি উৎসাহী। ৪টি চারের সঙ্গে তাই সাতটি ছক্কা। পরে প্রথম ওভারেই নিয়েছেন আহমেদ শেহজাদের উইকেট। ম্যাচসেরা কে—ম্যাচ শেষে এ প্রশ্নটার তাই মূল্যই রইল না।
প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও গৌতম গম্ভীর আর অজিঙ্কা রাহানে জুটি ভালো একটা শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানের পরও ভারত যেখানে করেছিল ১৩৩, কাল ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পর রান ৫ উইকেটে ১৯২। কারণ? যুবরাজের সংহার মূর্তি। প্রথম ১০ বলে মাত্র ৬ রান। ১১ নম্বর বলে আফ্রিদিকে চার মেরে শুভ উদ্বোধন। এর পর আফ্রিদিকেই স্লগ সুইপ করে ম্যাচের প্রথম ছক্কা। কিন্তু যুবরাজের আসল রাগটা যেন ছিল সাঈদ আজমলের ওপর।
এ সময়ের সেরা স্পিনার। এমন বোলারকেও নিজের দিনে কেমন পাড়ার বোলার বানিয়ে ফেলতে পারেন, সেটাই দেখালেন যুবরাজ। আজমলের ১১ বলে নিয়েছেন ২৮ রান। এর মধ্যে আছে ১৯তম ওভারে টানা তিনটা ছক্কাও। প্রথম ম্যাচের মতো এবারও গুলের বলে বিদায়। কিন্তু বড়দিনের রাতে যুবরাজের উইকেট পাওয়ার পর গুলের মুখে ছিল চওড়া হাসি, এ দিন অবশেষে যুবরাজকে ফেরাতে পারার স্বস্তি।
এত রান তাড়া করে পাকিস্তান কখনো জেতেনি। আগের সর্বোচ্চ তাড়া করার রেকর্ডটা ছিল গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে (১৭৮/২)। পাকিস্তানের সামনে ছিল পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। ৭৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পর মোহাম্মদ হাফিজের ২৬ বলে ৫৫ পাকিস্তানকে দারুণভাবেই রেখেছিল ম্যাচে। কিন্তু এক ওভারেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন বাংলার ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। শেষ দুই ওভারে লাগে ২৬ রান। কঠিন হলেও অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। পাকিস্তান আগের ওভারগুলোয় ১২–১৫ রান করেই তুলছিল। ১২ থেকে ১৮—এই ৭ ওভারে এসেছে ৮৩ রান। সবচেয়ে বড় কথা উইকেটে হাফিজ, যাঁকে তখন যুবরাজের চেয়েও বিধ্বংসী দেখাচ্ছে।
এরও কিছুক্ষণ আগে ধোনি খেলেছেন এক জুয়া। প্রথম দুই ওভারে ২৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য দিন্দাকে ফিরিয়ে এনেছেন ১৭তম ওভারে। দিন্দা উমর আকমলকে ফিরিয়ে আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন। কিন্তু আসল কাজ করলেন নিজের পরের ওভারে। ১৯তম ওভারে দ্বিতীয় বলে হাফিজকে ফিরিয়েই বলতে গেলে ম্যাচের মীমাংসা করে দিলেন। চতুর্থ বলে কামরানকে ফিরিয়ে দূর করে দিলেন শেষ সংশয়টুকুও। ২ উইকেটের চেয়েও বড় ব্যাপার, ওই ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে শেষ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্যটাকে দাঁড় করিয়ে দিলেন অসম্ভবের সামনে। তথ্যসূত্র: স্টার ক্রিকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ২০ ওভারে ১৯২/৫ (গম্ভীর ২১, রাহানে ২৮, কোহলি ২৭, যুবরাজ ৭২, ধোনি ৩৩, রায়না ১*, রোহিত ৪*; গুল ৪/৩৭)। পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (জামশেদ ৪১, শেহজাদ ৩১, উমর আকমল ২৪, হাফিজ ৫৫, আফ্রিদি ১১, কামরান ৫, মালিক ৩*, গুল ৫; ভুবনেশ্বর ১/৪৬, ইশান্ত ১/৩৪, দিন্দা ৩/৩৬, অশ্বিন ১/২৮, যুবরাজ ১/২৩)।
ফল: ভারত ১১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: যুবরাজ সিং। ম্যান অব দ্য সিরিজ: মোহাম্মদ হাফিজ।
নিউজরুম