ফসলি জমিতে আশ্রয়ণ এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

0
194
Print Friendly, PDF & Email

কৃষি ডেস্ক(২৮ডিসেম্বর): ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্বশালেপুরে এলাকাবাসীর বিরোধিতার মুখে প্রায় তিন একর ফসলি জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর এই কাজ শুরু হয়। এই জমি রক্ষার দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১টি কৃষক পরিবার গত সোম মঙ্গলবার ওই এলাকায় ঝাড়ু মিছিল বের করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। যেখানে মাটি ভরাট করা হচ্ছে, সেই জমিসহ আশপাশের জমিতে সরিষা, রসুন, কলাই, মসুরসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে। মাটি ফেলার কারণে জমির ফলন্ত খাদ্যশস্যগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
ওই এলাকার সাহেদা খাতুন (৭০) বলেন, ‘এই চরের পাঁচ বিঘা জমির আয়ে আমার আট সদস্যের পরিবার চলে। জমি কেড়ে নেওয়া হলে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।ছাত্তার বিশ্বাস (৫০) বলেন, ‘বাপদাদার আমল থেকেই জমিতে চাষ করে আমারা বেঁচে আছি। ১৮ বছর ধরে খাজনাও দিয়েছি। এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে আমাদের উঠতি ফসল মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা নদীর পাড়ে শালেপুর মৌজায় তিন ফসলি ওই জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। ভোগদখলকারীরা জমিদারি পত্তনমূলে মালিক থাকায় ১৯৮১ সাল থেকে ওই জমির খাজনা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু পরে রেকর্ডে জমিগুলো সরকারি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়। কারণে ১৯৯৯ সাল থেকে উপজেলা ভূমি কার্যালয় খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। ওই জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত শফি উদ্দিন বিশ্বাস উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) রিট করেন। গত ১১ নভেম্বর আদালত জমির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। এরপর ১৩ ডিসেম্বর আদালত ওই স্থিতাবস্থার আদেশটি প্রত্যাহার করেন। পরে ২০ ডিসেম্বর চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন। এখন মাটি ভরাটকাজ চলছে। ২৬৭ মেট্রিক টন গমের বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্পের কাজ তদারক করছেন স্থানীয় হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
মামলার বাদী শফি উদ্দিন বিশ্বাস (৩৭) বলেন, ‘জমির স্বত্ব দাবি করে আমি আদালতে দুটি মামলা করেছি, সেগুলো চলমান রয়েছে। স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে বললেও আমরা কোনো কাগজ পাইনি। কিন্তু ইউপির চেয়ারম্যান চরে পুলিশ এনে মাটি ভরাট শুরু করেছেন।
ইউপির চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী জানান, ৮০টি ভূমিহীন পরিবারের বসবাসের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকার জমি পিএস (পাকিস্তান সেটেলমেন্ট ১৯৫২ সাল) রেকর্ডে নদী শিকস্তি এবং হাল দিয়ারা জরিপে সরকারি খাসজমি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ওই খাসজমিতেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইউএনও দিল আফরোজা বেগম জানান, আইনি কোনো বাধা না থাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। জমিতে যাঁরা ফসল লাগিয়েছিলেন, তাঁদের বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার জন্য ইউপির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

 

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন