সাংবাদিকদের কব্জি কাটার হুমকি বেপরোয়া এসহাকের

0
284
Print Friendly, PDF & Email

নারায়ণগঞ্জ (২৮ ডিসেম্বর) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাংবাদিকদের হাতের কবজি কেটে নেওয়ার হুমকিদাতা এসহাক মিয়া স্থানীয় এমপির মদদ পেয়ে হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া।গত ২১ ডিসেম্বর এসহাক রূপগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ১০ সাংবাদিককে তাদের হাতের কবজি কেটে নেওয়ার হুমকি দেন।

এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন নম্বর (০১৯১১৫৪৮৯৩৬) বন্ধ রয়েছে। তার মোবাইল ফোনে কল করলে একটি ফিরতি এসএমএস আসে। এতে লেখা রয়েছে, ‘কামরুল হাসান তুনির ও মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন ভাইয়ের সালাম নিন, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগে যোগ দিন। প্রচারে: মোহাম্মদ এসহাক গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগ।’

এসহাক যুবলীগের বড় কোনো পদে না থাকলেও তার বেপরোয়া হওয়ার পেছনে রয়েছে স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসলেও প্রশাসন তাকে ও তার বাহিনীকে গ্রেফতার করছে না।

স্থানীয় সাধারণ ও নিরীহ মানুষ তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এমপির প্রশ্রয়ে দিন দিন তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে এলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। ক্ষমতার দাপটে তার কাছ থেকে সাংবাদিকরাও ছাড় পাচ্ছেনা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বলাখা গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে এসহাক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ বছর আগে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি‌। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগ ক্যাডার। তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীনের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় একের পর এক অপকর্ম শুরু করেন। এক বছর আগে এসহাক যুবলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীনের ছত্রছায়ায় থেকে এমপির নির্দেশে এরপর থেকে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার অত্যাচারে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও ক্ষুব্ধ। তবে তার ভয়ে প্রতিবাদটুকু করারও সাহস পাননা কেউ।

প্রতিবাদ করলেই তার বাহিনী দিয়ে প্রতিবাদকারীর ওপর হামলা চালানো হয়, মামলা দিয়ে করা হয় হয়রানি। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে তার বাহিনী। শেষ পর্যন্ত এমপির নির্দেশে সেখান থেকেও পার পেয়ে যান ক্যাডার এসহাক।

তার অপকর্মের কথা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এসহাক গত ২১ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে ১০ সাংবাদিকের হাতের কবজি কেটে নেওয়ার হুমকি দেন। পরদিন শুক্রবার বিকেলে বাহিনী নিয়ে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা চালান তিনি। এসময় এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেন তারা। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা হয়।

ঘটনার ৫ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ এসহাককে গ্রেফতার করতে পারেনি। হুমকি, হামলা, মামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক ও সর্বস্তরের জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

এদিকে, এসহাক সাংবাদিকদের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাদের বিরুদ্ধে এসপি কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। এতে সাংবাদিক সমাজ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এসহাকের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

তার কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও মজুদ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তিনি এসব অস্ত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে থাকেন।

এ বিষয়ে থানা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন জানান, এসহাক যুবলীগের কর্মী নন। তিনি গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার অপকর্মের দায় যুবলীগ নেবে না।

তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন বলেন, ‘এসহাক ছেলেটা উশৃঙ্খল। সারাদিন নেশা করেন। তিনি একজন যুবলীগ কর্মী। তবে ইদানিং তিনি যেভাবে অপকর্ম করছেন, তার কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার’।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তিপ্রিয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী। চোরের মার বড় গলার ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দিয়েছেন এসহাক।

তিনি সাংবাদিকদের প্রতি হুমকি ও প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ‘সন্ত্রাসী’ এসহাকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাকে শাস্তি দিলে অন্যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, এসহাক যুবলীগের কেউ না। তিনি যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে বেড়ায়। তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতিক) বলেন, ‘এসহাক যুবলীগের সদস্য না। এ ধরনের সন্ত্রাসীরা আমাদের কর্মী হতে পারেনা।’

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুর রহমান জানান, এসহাককে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিউজরুম

শেয়ার করুন