মানুষ মারার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে হুকুমের আসামি করা হবে : খালেদা জিয়া

0
447
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (২৭ ডিসেম্বর) : লগি-বৈঠা ও গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যাসহ গুম-খুনের ঘটনায় হুকুমের আসামি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা’ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া।

জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, যতণ পর্যন্ত নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি মানা না হবে, কর্মসূচি তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। ট্রাইব্যুনালের ওপর জনগণের আস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে কাছে টানার জন্যই যুদ্ধাপরাধী বিচারের মুলা ঝুলানো হয়েছে। জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবি তুলে খালেদা জিয়া হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎসহ জ্বালানি তেলের দাম আবারো বাড়ানো হলে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেয়া হবে।

গতকাল রাজধানীজুড়ে টানা সাত ঘণ্টা গণসংযোগকালে বিভিন্ন স্থানে দেয়া পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল ভেদ করে গাবতলী থেকে শুরু হয় এই গণসংযোগ। জনতার ঢল নামে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা অবধি রাজধানীর প্রতিটি পথে।

সন্ধ্যায় বাড্ডার ভাটারা বালুর মাঠে শেষ পথসভায় খালেদা জিয়া আগামী সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেনÑ সরকারকে বলছি, আগামী অধিবেশনে নির্দলীয় সরকারের বিল নিয়ে আসুন, আমরা সংসদে যাবো। আলোচনা করে আমরা সবাই মিলে এই বিল পাস করতে চাই।

তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, সরকার তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। আর যদি তা না আনে, সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তখন আর সময় থাকবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলে খালেদা জিয়া বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে এনে নিজেদের সুবিধামতো রায় দেয়া হয়েছে। এখন এ নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। টাকা নিয়ে রায় দেয়া হয়েছে বলেও কথা উঠেছে। এ সরকারের মুখেই শুধু সংবিধানের কথা। সংবিধানকে তারাই গুরুত্বহীন করেছে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ উল্লেখ করে বলেন ‘মাথায় গণ্ডগোল নিয়ে তার আর সরকারপ্রধানের চেয়ারে বসার যোগ্যতা নেই।

বেলা ২টা থেকে বাড্ডার এই বালুর মাঠে অপো করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন পথ মাড়িয়ে খালেদা জিয়া যখন এখানে আসেন তখন স্লোগানে-স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। দেরিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য শুরু করেন খালেদা জিয়া। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বেঈমানের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয়। স্বাধীনতার পর তারা দেশে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল, এখনো করছে। ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসির ওপর নির্ভর করে এখন তারা চিরস্থায়ীভাবে মতায় থাকতে চায়।

দেশ আজ দুর্নীতিবাজ, দখলবাজের হাতে পড়েছে। শিাঙ্গনকে অস্ত্রাগার বানানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ, শিল্পকারখানায় অস্থিরতা চলছে, কৃষি খাতে পিছিয়ে পড়ছে দেশ, প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে।

শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে ছেড়ে দেয়ার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাস করলে পুরস্কৃত হয়, মানুষের জন্য কাজ করলে জেলে যেতে হয়। তার প্রমাণ, আমাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিশ্বজিৎ দাশ হত্যা প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, সংবাদপত্রে ছবি ছাপা হওয়ার পরও সরকার তার দায় এড়াতে চায়। প্রথমে বলেছে, তাদের ছাত্রলীগ জড়িত নয়। এখন প্রকাশিত হচ্ছে সরকারের হুকুমেই ওই সন্ত্রাসীরা রাস্তায় নেমে বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুকুমেই ছাত্রলীগ মাঠে নেমেছে। তাকেও এই হত্যার হুকুমের আসামি করা হবে।

খালেদা জিয়া দিনের গণসংযোগের শুরুতে গাবতলীতে পথসভা করেন। এরপর কল্যাণপুর, আগারগাঁও সড়ক ও ফার্মগেট হয়ে গণসংযোগ করতে করতে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে আসেন খালেদা জিয়া। সেখানে পথসভা শেষে এফডিসি সড়ক হয়ে মগবাজার রেলক্রসিং, মগবাজার মোড়, রমনা থানা সড়ক, বেইলি রোড সড়ক, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট হয়ে কার্জন হল সড়ক, নগরভবন, গুলিস্তানে গোলাপশাহ মাজার সড়ক, নর্থ সাউথ সড়ক, রায়সাবাজার সড়ক হয়ে ধোলাইখালে যান। ধোলাইখালেও তিনি সংপ্তি বক্তব্য রাখেন।

এরপর সেখান থেকে দয়াগঞ্জ সড়ক হয়ে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে পথসভা করেন বিরোধীদলীয় নেতা। সেখান থেকে সায়েদাবাদ, মানিকনগর, বৌদ্ধমন্দির হয়ে সবুজবাগের বাসাবো বালুর মাঠে চতুর্থ পথসভা করেন।

খালেদা জিয়া এরপর বাসাবো হয়ে খিলগাঁও ফাইওভারের নিচ দিয়ে মালিবাগ মোড়, মৌচাক, রামপুরা সড়ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস অতিক্রম করে বাড্ডার ভাটারা মাঠে সর্বশেষ পথসভায় বক্তব্য দেন।

সবুজবাগ : সরকার জামায়াতকে কাছে টানতে চায় : সবুজবাগ বালুর মাঠের পথসভায় খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ মতায় এলেই দেশে গুম-খুন নৈরাজ্য শুরু হয়। এসব হত্যা-খুনের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। কারণ তাদের নির্দেশেই এসব চলছে।

জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে কঠিন সময়। রাজপথে না নামলে কেউ রা পাবেন না।

খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আন্দোলন করছে না। আন্দোলন করছে দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাদের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। স্কাইপের মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীকে কাছে টানার জন্যই যুদ্ধাপরাধী বিচারের মুলা ঝুলানো হয়েছে।

সরকারকে তিনি বলেন, আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে এই বিচার চান তাহলে আপনাদের দল থেকে শুরু করুন। আপনাদের দলে এবং আপনাদের অনেক অত্মীয়স্বজন যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত।

সবুজবাগের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক দিন, নইলে পালানোর পথ পাবেন না।

যাত্রাবাড়ী : তেল-গ্যাসের দাম আবার বাড়ালে হরতাল : যাত্রাবাড়ীর পথসভায় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার ছয়বার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। যদি আবারো তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তা হলে হরতাল ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায়। আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। ’৮৬ সালে তারা জামায়াতকে সাথে নিয়ে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছিল।

খালেদা জিয়া এ সময় একাধিক ছবি তুলে ধরেন যাতে দেখা যায় শেখ হাসিনা ও নিজামীসহ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ এক সাথে বসে বৈঠক করছেন।

খালেদা জিয়া বলেন, তখন জামায়াত তাদের কাছে যুদ্ধাপরাধী ছিল না। এখন জামায়াত আমাদের সাথে এসেছে বলেই তারা যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে পারবে না। কারণ তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে বিচার করতে চাচ্ছে। এ ঘটনা ফাঁস হয়ে গেছে। টুইটার, ইউটিউবসহ ইন্টারনেটজুড়ে ওই ঘটনা ফাঁসের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের সত্যিকার বিচার করতে হলে আওয়ামী লীগের সরকার ও দলের যুদ্ধাপরাধী দিয়ে তা শুরু করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার বলছে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আন্দোলন করছি। কিন্তু আমরা আন্দোলন করছি দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও নিরাপত্তার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের জন্য।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনার কথা বললেও তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সব চেয়ে বেশি ভয় পায়। কারণ তারা নিজেরা মুক্তিযুদ্ধ করেনি। এ কারণে তারা স্বাধীনতার পর লালবাহিনী ও নীলবাহিনী দিয়ে সিরাজ সিকদারসহ ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করেছে। ভবিষ্যতে এর বিচার হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বিএনপিই মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আমরাই স্বাধীনতার প্রকৃত স্বপক্ষের শক্তি।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী চোরের মায়ের বড় গলা বলে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু এখন মানুষ জানে কে চোরের মা। কার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ ডলার নিয়ে ধরা পড়েছে তা এখন অনেকেই জানেন। ওই ডলার এখন মার্কিন সরকারের হাতে। সময় মতো এ ঘটনার বিচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এত বিশাল সম্পদের মালিক কিভাবে হয়েছে, সে কী করে তা মানুষ জানতে চায়।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনিই চোরের মা এখন এ কথা সবাই জানেন।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী সকালে উঠেই মিথ্যা কথা বলা শুরু করেন। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলেন সে দেশে কিভাবে উন্নতি হবে?

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ আদালত রং হেডেড মানে মাথা খারাপ বলেছেন। এই মাথা খারাপ প্রধানমন্ত্রীকে যত বেশি সময় চেয়ারে রাখা হবে ততই দেশের জন্য বিপদ।

বিএনপির ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে যাত্রাবাড়ীর পথসভায় আরো অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা, আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।

দুপুর সাড়ে ১২টায় খালেদা জিয়ার আসার কথা থাকলেও সকাল থেকেই পুরো যাত্রাবাড়ী এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। শহীদ ফারুক সড়কের সভামঞ্চের সামনে থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত ও আশপাশের গলি, ফুটপাথ, ভবনগুলোর ছাদ লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বেগম খালেদা জিয়া পথসভাস্থলে পৌঁছেন বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে। তিনি পৌঁছার কিছুণের মধ্যেই বক্তব্য রাখা শুরু করেন। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি বক্তব্য রাখেন।

খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার শেয়ারবাজার, হলমার্ক ও পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট ও পাচার করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি মতায় গেলে লুট ও পাচার করা অর্থ ফেরত আনা হবে। শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ফেরত দেয়া হবে।

তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো মানুষই নিরাপদ নয়। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও খুন, গুম বন্ধ করুন, না হলে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীকে হুকুমের আসামি করে মামলা করা হবে।

বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, আজকের প্রধানমন্ত্রী লগি-বৈঠা দিয়ে ও গানপাউডার ছিটিয়ে মানুষ হত্যার হুকুম দিয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে হুকুম দিয়েছিলেন, একটি লাশ পড়লে ১০টি লাশ ফেলতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিরোধী দলের আন্দোলন দমাতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে রাজপথে নামার হুকুম দিয়েছেন। এ হুকুম পেয়েই বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সরকার একের পর এক দেশ ও জাতির স্বার্থবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ ও ব্যর্থ এ সরকারের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে এখন গণ-অভ্যুত্থানই একমাত্র পথ।

তিনি বলেন, এ সরকারের হাতে কেউ নিরাপদ নয়। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা কেরানীগঞ্জের সংখ্যালঘু পরিবারের শিশু পরাগকে ধরে নিয়ে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে।

তিনি বলেন, দেশ যেভাবে চলছে এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এ কারণে আমি গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিতেই আপনাদের মাঝে এসেছি।

পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবি তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী জাসদ নেতা ইনু এখন বড় বড় কথা বলছেন। অথচ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে জামায়াত নেতা নিজামীর সাথে হাত মেলাচ্ছেন। এই ইনু জীবনেও ইলেকশনে জিততে পারেননি। ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন দয়া করে তাকে এবার জিতিয়ে দিয়েছেন।

কারওয়ানবাজারে বিশাল জনসমুদ্র : গাবতলীর পর কারওয়ানবাজারে পথসভায় বক্তব্য রাখেন ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার আগমন উপলে কারওয়ানবাজার পরিণত হয় লাখো মানুষের অখণ্ড সমুদ্রে।

কারওয়ানবাজারের বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, হলমার্ক, ডেসটিনি ও শেয়ারবাজার থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে সীমাহীন লুটপাটের মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দাবি করে, এ দেশকে তারা সোনার বাংলা বানিয়েছে। সত্যিকার অর্থে তারা এই দেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে।

বিএনপি নেত্রী বলেন, ৫০ টাকার নিচে সবজি পাওয়া যায় না। ১৪০ টাকার নিচে ডাল পাওয়া যায় না। ডিমের হালি ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও কেউ ব্যবসায় করতে চাইলে তার কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপির মহাসচিবসহ সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে। দেশে নারী নির্যাতন কমাতে হবে। বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক গুম-হত্যা বন্ধ করতে হবে। আবারো তেল গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তার বিরুদ্ধেও বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করবে। হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে সরকারকে জনগণের দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।

তিনি বলেন, কুইক রেন্টালের নামে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। সরকার গত চার বছরে তেল, গ্যাস, বিদুত্যের দাম ছয় দফায় বাড়িয়েছে। তারা আবারো তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চাচ্ছে।

খালেদা জিয়া বলেন, এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সরকার দরিদ্র মানুষের কথা একটুও ভাবে না। তারা ভাবছে , দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের টাকা কিভাবে হাতিয়ে নেয়া যায়

তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে দেশের বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থান চাই। সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা চাই।

বিরোধী নেত্রী বলেন, সাংবাদিকেরা সরকারের দুর্নীতি, অপকর্মের খবর জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। তাই এখন সংবাদকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের ওপর পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করছে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি যখন সরকারের অপকর্ম প্রকাশ করতে যাচ্ছিল তখনই তাদের হত্যা করা হয়। মাহমুদুর রহমান সরকারের অপকর্মগুলো প্রকাশ করেছেন বলে তাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এভাবে স্বৈর আচরণ করে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, দুই আবুলের (সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন ও আবুল হাসান) সাথে সরকারের শীর্ষ নেতারা জড়িত। দুই আবুলকে মামলায় জড়ানো হলে আওয়ামী লীগের অনেক দিদিমনি, আপামনি ও দাদার নাম প্রকাশ হয়ে যেত। তাই দুই আবুলকে বাঁচাতে সরকার এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকেও সরকার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে না। যাদের বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে তাদের সাথেই ’৯৬-তে আওয়ামী লীগ সরকার জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী আওয়ামী লীগের ঘরেই আছে। যদি বিচার করতেই হয় তাহলে তাদের বিচার আগে করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অতীতে আমাকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেছেন ‘চোরের মায়ের বড় গলা’।

তিনি বলেন, আসলে চোর কে তা দেশবাসী এখন জেনে গেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, মেয়ে ও তার বোন রেহানাই আসলে চোর। কারণ তারা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর প্রমাণ বিএনপির কাছে আছে। যথাসময়ে এর বিচারও করা হবে।

কারওয়ান বাজারের পথসভায় আরো অংশ নেন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।

গাবতলী : তত্ত্বাবধায়কের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে : গণসংযোগের শুরুতে বেলা সাড়ে ১১টায় গাবতলীর এস এ খালেক মাঠে দিনের প্রথম সভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। কারণ আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয় না।

বেগম জিয়া বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে উপনির্বাচন দেখেছি। ’৭৩ সালেও আওয়ামী লীগের নির্বাচন দেখেছি। তারা দলের বাইরে কাউকে চেনে না। তাদের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

তিনি বলেন, ’৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার দাবিতে জ্বালাও পোড়াও করেছে।

এখন তারা আদালতের দোহাই দিচ্ছে। অথচ আদালত বলেছিলেন আরো দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হতে পারে। কিন্তু তারা আদালতের এ নির্দেশনা পাশ কাটিয়ে সংসদে বিল পাস করে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, রায় ঘোষণার ১৬ মাস পর এবং আদালত থেকে অবসরে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। প্রথম রায়ে তিনি আরো দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে বলে মত দিয়েছেন। অথচ পরে অবসরে গিয়ে নিজের সেই রায় পাল্টে দিয়েছেন। কারণ, তিনি আওয়ামী লীগের লোক।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এখন রাস্তায়, জলা-জঙ্গলে মানুষের লাশ পড়ে থাকে। কেন এত মানুষ খুন হয়? তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে এদেশে কেউই নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সত্য কথা ও এই সরকারের দুর্নীতি অপকর্মের কথা লেখাই তাদের অপরাধ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার চিরস্থায়ীভাবে মতায় টিকে থাকার জন্য ব্যাপক হারে লুটপাট করেছে।

তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায় বলেই এত বড় রাজধানী শহর ঢাকায় বিরোধী দলকে জনসভা করার মতো একটি জায়গাও দেয়া হয় না।

১৮ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, এ সরকার গণতন্ত্র চায় না। তারা সবাইকে কারাগারে বন্দী করে নিজেরা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়।

তিনি বলেন, এ সরকার কারো সাথেই ভালো ব্যবহার করে না। অন্যায় না করা সত্ত্বেও বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পুরে রেখেছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। অথচ নিজেদের দলের নেতাকর্মীদের অত্যাচার, লুট, সন্ত্রাসের কোনো বিচার করছে না।

বেগম খালেদা জিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের করা সব গুম-খুনের বিচার হবে। তিনি বলেন, বিশ্বজিতের খুনিরা খুনের কথা স্বীকার করেছে। সরকারের লোকেরা তাদের অস্ত্র দিয়ে পাঠিয়েছে মানুষ খুন করতে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই দিন দিন নয়, সামনে আরো দিন আছে। এ হত্যা, গুম, খুনের জন্য তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

বিএনপি নেত্রী বলেন, ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার বিচার হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিশ্বজিতের কী অপরাধ ছিল? নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন। তারা ঘটনা ঘটায়, আর দোষ দেয় বিএনপি-জামায়াতকে।

খালেদা জিয়া আরো বলেন, সরকারের পাচার করা সব টাকা ফেরত আসবে। জবাবদিহি করতে হবে তাদের। নিজেদের সব গুম, খুনের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার।

তিনি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি অন্যায় না করেন, তাহলে নিজেদের সাত হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহার করেছেন কেন?’

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আপনারা প্রত্যাহার করলেও বিএনপি মতায় গেলে ওইসব মামলা আবারো চালু করা হবে।’

খালেদা জিয়ার আগমন উপলে গোটা গাবতলী ও সংলগ্ন আশপাশ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এস এ খালেকের মাঠ, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে টেকনিক্যাল, বাঙলা কলেজসহ আশপাশ বিরাট এলাকা ১৮ দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের এক জনসমথুদ্রে রূপ নেয়।

নিউজরুম

শেয়ার করুন