খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী, খামাখা মানুষ পুড়িয়ে মারবেন না

0
405
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (২৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবেই। তারা উপযুক্ত সাজা পাবে।’ তিনি খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘খামাখা মানুষ পুড়িয়ে মারবেন না।

তাদের কষ্ট দেবেন না। জনগণের অভিপ্রায় বোঝার চেষ্টা করেন।’বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন পথসভায় বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় পতাকা, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শেখ হাসিনা কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। নগরের বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট কাউন্সিলে অংশ নেন। দীর্ঘ নয় বছর পর ঢাকা মহানগরের কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয়ের মাসে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন। এর আগেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় ঘোষণার দিন হরতাল ডেকেছিলেন। তাই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে।’

সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে উনি চলছেন: বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগকে সাপ বলেন। তাহলে যুদ্ধাপরাধীরা কী? ৭১ সালে যারা লুটপাট আর ধর্ষণ করেছে, তারা আপনার কাছে অত্যন্ত উন্নত প্রজাতির জীব।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘উনি সাপ নিয়ে খেলছেন। সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলছেন। তাঁর সময়ে একই দিনে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বাসের ভেতর আগুন দেন। মানুষ হত্যা করেন। তিনি মানুষের জীবন নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর আপনার ক্ষোভ। আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই আপনার স্বামী মেজর থেকে মেজর জেনারেল হতে পেরেছিলেন। পাকিস্তান আমলে বাঙালিরা মেজরের ওপর পদোন্নতি পেতেন না। স্বামীর হত্যাকারীদের কাছ থেকে কীভাবে গাড়ি-বাড়ি-টাকা নেন?’ প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চট্টগ্রামের কোর্টে জিয়া হত্যার মামলা আছে। দুইবার ক্ষমতায় এসেও স্বামীর হত্যার বিচার করেননি কেন? এর জবাব জাতির কাছে দেন। নিজের স্বামীর হত্যার বিচার করেন নাই। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বাঁচাতে চেয়েছিলেন। এখন নেমেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৮১ সালে জিয়া মারা গেলেন, তখন জিয়ার ছেঁড়া প্যান্ট দিয়ে পুত্রদের প্যান্ট বানালেন। সংসার চালাতে পারতেন না। এরশাদের কাছ থেকে গাড়ি, বাড়ি ও টাকা নিলেন। আবার গুলিস্তান চত্বরে বক্তৃতায় তাঁকে (এরশাদ) স্বামীর হত্যাকারী বলেছিলেন। তাহলে স্বামীর হত্যাকারীর কাছ থেকে কীভাবে বাড়ি, গাড়ি টাকা নিলেন?’
শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কালোটাকা সাদা করেছেন। এ টাকা কি সত্ পথে উপার্জন করেছেন? আপনার ছেলেরাও দুর্নীতি করেন। তাঁদের পাচার করা টাকা ফেরত নিয়ে এসেছি। তার পরও লজ্জা হয় না। চোরের মার বড় গলা।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড থেকে মাস্টার্স করেছে। মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্টার্স করেছে। আপনার ছেলেরা তো সরকারি টাকা নিয়েছে লেখাপড়ার জন্য। কী শিক্ষা নিয়েছে। একজন মানি লন্ডারিং, অন্যজন ড্রাগে মাস্টার্স।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। হল-মার্ক, ডেসটিনির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। পদ্মা সেতুর পেছনে কে আছে, কেন আছে তা আমাদের জানা আছে।’
সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখে ওয়ার্ডে, থানায় কাউন্সিল করতে হবে। প্রতিটি সংগঠনকে আরো সুসংহত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তবে সময়মতো কাউন্সিল ও সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু না করায় তিনি অসন্তোষও প্রকাশ করেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, হাজি সেলিম, শাহে আলম মুরাদ বক্তব্য দেন। কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়। ২৯ ডিসেম্বর নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা হবে বলে জানা গেছে।
কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নিউজরুম

শেয়ার করুন