রফতানি খাতে চিহ্নিত সমস্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগী ভূমিকা প্রয়োজন

0
247
Print Friendly, PDF & Email

অর্থনীতির অবস্থা ভালো নেইÑ বিশেষজ্ঞদের এমন অভিমতের নিন্দা করেছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যবসায়ী নেতাদের মন্তব্যও অর্থমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। বিদেশী পত্রপত্রিকায় দুর্নীতির খবর ছাপা হলেও অর্থমন্ত্রী আগে অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, শীর্ষপর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। এরপর সরকার তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছে কি না জানা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বারবার বলছেন, তারা দুর্নীতি ও নানা জটিলতার কারণে রফতানি বাণিজ্যেও বারবার হোঁচট খাচ্ছেন, মুখথুবড়ে পড়ছে রফতানি বাণিজ্য।

জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছেÑ সাত বাধার মুখে পড়েছে দেশের রফতানি খাত। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ব্যাংকগুলো অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়ে অনীহা এবং ব্যাংকঋণের শ্রেণিবিন্যাসে নতুন নিয়ম। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি রফতানি আয়। দেশের সব রফতানিমুখী শিল্পে প্রায় এক কোটি শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর ফলে পরোক্ষভাবে প্রায় চার কোটি মানুষের জীবন নির্বাহ হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, দুর্বল অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা; বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি; ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার; ডিজেলের উচ্চমূল্য; দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়া এবং ইউরো জোনের প্রকট ঋণসঙ্কট, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা।

সঙ্গত কারণেই এর প্রভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশের রফতানিকারকদের সক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বা রফতানিকারকদের সঙ্কট বাড়িয়েছে অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয়ে ব্যাংকগুলোর অনীহা এবং ব্যাংকঋণের শ্রেণিবিন্যাস-বিষয়ক জটিলতা। ব্যবসায়ীরা জ্বালানি সঙ্কট নিয়ে এমনিতেই বিব্রত। তার ওপর বর্তমান সরকার সপ্তমবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। শুধু বিদ্যুৎ নয়, বাড়ছে গ্যাসের দামও। ২০০৯ সালে বিইআরসি সবধরনের গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়েছিল। গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেয়ে নতুন শিল্পকারখানা চালু হচ্ছে না। যেসব শিল্পকারখানায় আগে থেকেই গ্যাসের সংযোগ রয়েছে, এখন সেখানেও গ্যাস দিতে পারছে না সরকার। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় শিল্পকারখানা চালু করা যাচ্ছে না। গ্যাসসঙ্কটের কারণে গ্যাস জেনারেটরও চলছে না। বাধ্য হয়ে ডিজেল জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে হচ্ছে। অথচ ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফার্নেস অয়েলে শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। রফতানিকারকেরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির অভাবেও ব্যাংকগুলো লাগামহীন সুদের হার নির্ধারণ করছে। ঋণ বিতরণে সুদের হার সাড়ে ১৫ শতাংশের মধ্যেও রাখছে না বেশির ভাগ ব্যাংক। প্রায় সব ব্যাংকের গড় সুদহার ১৭ থেকে ১৮ শতাংশে ওঠানামা করছে। এই উচ্চ সুদ দিয়ে কোনো ব্যবসায় নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকিয়ে রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয় না করায় রফতানিমুখী শিল্পগুলো আরো কঠিন অবস্থায় পড়েছে বলেই ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাতেও সাড়া মিলছে না। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের চিহ্নিত সমস্যাগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া উচিত। বিশেষত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। আশা করি, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন।

শেয়ার করুন