মেহেদী মাসুদ —‘দুঃখিত, আমার আসতে একটু দেরি হচ্ছে।’ ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে মুঠোফোন বার্তায় জানালেন ফেরদৌস। প্রথম আলোর কার্যালয়ে তিনি এলেন সন্ধ্যার একটু আগে।
‘কোথায় ছিলেন?’
‘চ্যানেল আই অফিসে। ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল প্রতিযোগিতার গালা রাউন্ড হবে কাল (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়। এই অনুষ্ঠানে আগেরবারের সেরা হাসিনের সঙ্গে পারফর্ম করতে হবে। তারই মহড়া হয়েছে।’
অভিনেতা ফেরদৌস। বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা ছবিতে চুটিয়ে অভিনয় করছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার (রিয়ালিটি শো) বিচারক। উপস্থাপনা করছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচছেন। আড্ডার শুরুতেই এল প্রসঙ্গটি। ফেরদৌস বললেন, ‘আমাদের বাণিজ্যিক ছবির ভাবনা একটা জায়গায় আটকে আছে। সেই একই ধাঁচের গল্প, একই রকম চরিত্র, একই ধরনের গান, নাচ, ফাইট—অনেকগুলো বছর তো হলো, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির এতটুকু পরিবর্তন হয়নি।দর্শকের কথা কী বলব, আমার নিজের কাছেই একঘেয়েমি মনে হয়। তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের একটা পরিবর্তন আমি নিজেই আনতে চেয়েছি।’
কলকাতার ইটিভি বাংলার রিয়েলিটি শো ‘ঝুম তা রা রা’তে ফেরদৌসের সঙ্গে বিচারক ছিলেন সরোজ খান ও বিক্রম ঘোষ। আর ‘স্ট্রিট ড্যান্সার’ অনুষ্ঠানে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দানী দত্ত ও বারখা। বাংলাদেশে এরই মধ্যে তিনি শেষ করেছেন ‘সেরা নাচিয়ে’।এখন কাজ করছেন বাংলাভিশনে ‘নাচো বাংলাদেশ নাচো’ এবং এশিয়ান টিভির ‘স্টার ড্যান্স’ অনুষ্ঠানে। নাচের অনুষ্ঠানে ফেরদৌস বিচারক হচ্ছেন, আবার নাচছেন।এবার একটি প্রশ্ন সবার মনেই আসবে—ফেরদৌস নাচ শিখেছেন কবে?
ফেরদৌস বললেন, ‘আমার প্রথম ছবি হঠাৎ বৃষ্টি (১৯৯৮)। এই ছবিতে কাজ করার দুই বছর আগে আমার পরিচয় হয়েছিল আমির হোসেন বাবুর সঙ্গে। তিনি আমাকে তখন নাচ ময়ূরী নাচ ছবির নায়ক হিসেবে ভাবছিলেন। কিন্তু তার আগে তো নাচ শিখতে হবে। নাচব!—ভাবতেই হাসি পেত। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র। বাবু ভাই আমাদের নাচ শেখানোর দায়িত্ব দিলেন রহিমকে। আমাদের বলছি কারণ, তখন আমি, রিয়াজ আর শাকিল খান একই সঙ্গে নাচ শিখতাম।’
ফেরদৌস আরও বললেন, ‘কলকাতার ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আমার অনেক ধারণা পাল্টে গেছে। ওখানে একজন শিল্পী নিজেকে কোনো একটি জায়গায় আটকে রাখছেন না। অভিনয়ের পাশাপাশি নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁদের দেখেই আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে।’
নতুন বছরটা ফেরদৌসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ফেরদৌস আরেকটা ব্যাপার শিখেছেন—পরের বছরটি কেমন যাবে, এক বছর আগে থেকেই তা পরিকল্পনা করা। নতুন বছরের অনেক পরিকল্পনার কথা জানালেন ফেরদৌস—আগামী বছর বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে তাঁর গোটা বিশেক ছবি মুক্তি পাবে।বাংলাদেশের ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে শোভনের স্বাধীনতা, অন্তর্ধান, ৬৯ পাতলাখান লেন, দুই বেয়াইয়ের কীর্তি, ভাবীর আদর, সোহাগপুর, নেকড়ে অরণ্য ইত্যাদি। রয়েছে তাঁর নিজের প্রযোজিত ছবি এক কাপ চা। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তাঁর। ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা থিয়েটারের পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে। কলকাতায় মনোজ মিত্র মঞ্চের জন্য একটি গল্প তৈরি করে রেখেছেন। গল্পটি দুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে নিয়ে।তিনি চান, ফেরদৌস মঞ্চে শুরুতেই এই গল্পের নাটকে অভিনয় করুক। ফেরদৌসেরও তেমনই ইচ্ছা। এক কাপ চার পর তিনি আরেকটি ছবির কাজ শুরু করবেন। তাঁর এবারের ছবিটি হবে আনিসুল হকের ফাঁদ উপন্যাস নিয়ে। এক কাপ চা ছবির গান তৈরি করতে গিয়ে গান নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সঙ্গে। ফুয়াদ তাঁকে গান গাওয়ার ব্যাপারে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। একই উৎসাহ পেয়েছেন ইমন সাহার কাছ থেকেও। তাই এখন ফেরদৌস গোপনে গোপনে গান গাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন।শাহনেওয়াজ কাকলীর জলরং ছবিতে অনেকগুলো কবিতা আবৃত্তি করেছেন ফেরদৌস। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন শিমুল মুস্তাফা। আবৃত্তির একটা অ্যালবাম করারও ইচ্ছা আছে তাঁর। ইচ্ছে আছে চলচ্চিত্র পরিচালনা করার। আর এই স্বপ্নটা তিনি দেখছেন অনেক বছর ধরে। নিজের আরও একটা ইচ্ছার কথা জানালেন ফেরদৌস—বাবা, দাদা কিংবা নানা নয়, নায়ক থাকতে থাকতেই অভিনয় থেকে অবসর নেবেন তিনি।
আড্ডা প্রায় শেষ হতে চলল। এ সময় ফেরদৌসের মুঠোফোনটা বেজে উঠল। স্ত্রীর ফোন। মেয়ে নুজহাত নাকি বায়না ধরেছে, তার জন্য ক্রিসমাস ট্রি আনতে হবে। কারণ, পরদিন যে বড়দিন। ফেরদৌস এবার যাচ্ছেন মেয়ের জন্য ক্রিসমাস ট্রি সংগ্রহ করতে।
নিউজরুম