ঢাকা (২৭ ডিসেম্বর)
: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বনানী ওভারপাস উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার যানজটমুক্ত সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উম্মুক্ত হলো। এর ফলে বনানী রেলক্রসিংয়ে কোনো গাড়িকে থামতে হবে না। ৮০৪ মিটার দীর্ঘ এই ওভারপাসটি হবে সময় সাশ্রয়ী যোগাযোগের অন্যতম মাইলফলক।
বৃহস্পতিবার সকালে বনানী ওভারপাসের ফলক উন্মোচন শেষে আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বনানী রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে আগে অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, মারা গিয়েছেন। এই ওভারপাস হওয়ার ফলে এখন আর এটি হবে না। এটি হবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা।
তিনি বলেন, ‘‘সবাইকে ঢাকায় থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তাই ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসবেন, তাদের জন্য কমিউটার সিস্টেম চালু করবো।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে নদীপথ অবহেলিত ছিল। তাই এবার নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করেছি। অনেকগুলো নদীর কাজ সমাপ্ত করেছি। আরো নদীর ড্রেজিং কাজ চলছে। নদী ড্রেজিংয়ের ফলে দু’পাশে অনেক জমি উদ্বার করতে পারছি। পর্যায়ক্রমে সব নদী ড্রেজিং করবো। বুড়িগঙ্গাকে অনেকটাই দূষণমুক্ত করেছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘রেলকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। রেলের উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়টি আলাদা করেছি। অতীতে অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এসব রেললাইন বন্ধ করা হয়েছিল।’’
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওভারপাস ঘিরে ইউলুপ বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে ১৫০ কোটি টাকা লাগবে। এটিও করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আট হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। নতুন নতুন গ্যাসকূপ খনন করছি। গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সার্বিকভাবে আমাদের লক্ষ্য, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যাতে ২০২১ সালে দেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘পাঁচ কোটির মতো হতদরিদ্র মানুষের চেহারা পাল্টেছে। প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশে উন্নীত করেছি। এজন্য উন্নত দেশেরও স্বীকৃতি পাচ্ছি। শুধু রাজধানীর মানুষের নয়, সারা দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছি। বিশ্ব অর্থনীতির ধাক্কা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ডাবল ডিজিট থেকে কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করছি। পড়াশুনার মান উন্নত হচ্ছে। ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ কোটি বই বিনামূল্যে দিচ্ছি। লেখাপড়ায় মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা ভালো ফলাফল করছে।’’
নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই ওভারপাস নির্মাণ কাজে সম্পন্ন করায় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখনই সমস্যায় পড়ি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেই। তারা তা সম্পন্ন করে দেয়।’’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বনানী ওভারপাসের উদ্বোধন করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা রোপন করেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আবু সাইদ মোহাম্মদ মাসুদ ওভারপাস সস্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী গাড়িযোগে ৮০৪ মিটার দীর্ঘ ওভারপাসটি পরিদর্শন করেন। নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
৬ লেনের ওভারপাসটির প্রস্থ ২২ দশমিক ৫২ মিটার। এর পাইল সংখ্যা ২৬৮টি, পাইল ক্যাপ সংখ্যা ৪৪টি ও পিয়ার সংখ্যা ৩৩টি।
বনানী ওভারপাস নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। শতভাগ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর বনানী রেলক্রসিংয়ে সৃষ্ট অসহনীয় যানজট নিরসন করার লক্ষ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ২০১০ সালের ২ মার্চ বনানী ওভারপাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
নিউজরুম