কৃষি ডেস্ক(২৭ ডিসেম্বর): ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্বশালেপুর মৌজার প্রায় ৩ একর ফসলী জমি রক্ষার জোর দাবী জানিয়েছেন উক্ত এলাকার ৪১ কৃষক পরিবার। সম্প্রতি ওঁই চরে উঠতি ফসল বিনষ্ট করে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মান করার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্থরা ঝাড়– মিছিল করে তাদের মুখের অন্ন বিধ্বংশী এ প্রকল্প নির্মান কাজ বন্ধের দাবী জানিয়েছেন। এ দাবী পূরন না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। একই এলাকার ৭নং গ্রামের পিছনে উন্মুক্ত খালি মাঠে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা থাকার পরও স্থানীয় চেয়ারম্যান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রেশ ধরে ফসলী জমি নষ্ট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চরবাসীর দাবী, একই এলাকায় মাত্র ৩শ’ মিটার দুরত্বে ৮০টি পরিবার বসতির জন্য গত বছর দু’টি আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মান হলেও সেখানে বসতি পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর আবারও তিন ফসলী উর্বরা জমি নষ্ট করে আরো একটি আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মানের নামে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোটা অংকের টাকার ফায়দা লোটার হীন কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে।
জানা যায়, ১৬৮ নং শালেপুর মৌজায় প্রস্তাবিত ১/৩৬৬ নং খতিয়ানে ২৮০নং জোতে ১০২০/১৪ নং গং দাগ এর পদ্মার পাড়ে উক্ত উর্বরা ফসলী জমির অবস্থান। ভোগ দখলকারীরা জমিদারী পত্তনমূলে মালিক থাকার পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জমির খাজনা দিয়ে আসছিল। পরে উক্ত জমি খাস খতিয়ানে যাওয়ায় গত ১৪ বছর ধরে সরকার আর খাজনা নেয়নি।
এলাকার মানুষ জানায়, উক্ত জমির থোর সরিষা, উঠতি রসুন, কালাই, মসুর সহ বিভিন্ন ফসলী জমিতে লেবার ও ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে মাটি ফেলা হচ্ছে। এতে খাদ্য শষ্যগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে।একই এলাকার প্রায় অর্ধশত মহিলা পুরুষ লাঠি সোটা ও ঝাড়– নিয়ে জমি রক্ষার দাবীতে মিছিল করছে।
উক্ত চরের মৃত আঃ করিম বিশ্বাসের স্ত্রী সাহেদা খাতুন (৭০) জানায়, এই চরের ৫ বিঘা জমির ওপরই আমার ৮ সদস্যের পরিবার চলে। এ জমি নিয়ে গেলে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আরেক বিধবা নিলুফা (৫০) বলেন , এই চরে সরকার আমাকে ভূমিহীন হিসেবে এক একর জমি দিছে, জমিতে ধানের ব্লকও আছে, এখন আমার ৬ সদস্যের পরিবারের রেজেক কাইড়া নিবার লাগছে, আল্লায় ওগো গজবে হালাইবো। গ্রামের ছাত্তার বিশ্বাস (৫০) জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এ জমি চাষ করে আমারা বেঁচে আছি, ৮৬ (৪) ধারায় ১৮ বছকাল খাজনা দিয়ে এসেছি, এখন পুলিশ এনে আমাদের বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে উঠতি ফসলের মধ্যে মাটির চাপা দিচ্ছে। চরের প্রবীন মাতুব্বর ওয়াছেল বিশ্বাস (৭৯) বলেন, ক’ বছর আগে একই মৌজার একই খতিয়ানের জমি সরকার আমার কাছ থেকে স্কুল নির্মানের জন্য ৬৭ নং দান পত্র দলিলমূলে সচিব প্রাথমিক ও গনশিক্ষা বিভাগ বরাবর দলিল করে নিয়েছে। আর এখন আমাদের উক্ত জমিতে কোনো স্বত্ত নাই বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মাতুব্বরের পুত্র শফি উদ্দিন বিশ্বাস (৩৭) বলেন, এ জমি স্বত্ত দাবী করে আমি নিজে বাদী হয়ে হাইকোর্টে দু’টি মামলা করেছি, মামলাগুলো চলমান রয়েছে। স্থিতি অবস্থা ভেটেক হয়েছে বলে আমরা কোনো কাগজ পাইনি, তথাপি ইউপি চেয়ারম্যান চরে পুলিশ এনে মাটির টিলা নির্মান কাজ শুরু করেছেন। সে আরো জানায়, আমরা জীবন দিতে রাজি কিন্তু এ জমি ছাড়ব না।
চরহরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে.এম. ওবায়দুল বারী দীপু জানান, নির্মানাধীন আশ্রয়ন প্রকল্পের জমি পি.এস. রেকর্ডে নদী সিকস্তী এবং হাল দিয়ারা জরীপে সরকারি খাস বলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল থেকে এ আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মান হচ্ছে। আমি শুধু মাটির টিলা নির্মানের জন্য ২৬৭ মে. টন. গম বরাদ্দ পেয়েছি এবং কাজ চালু করেছি, বাকী কাজ সরকার করবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিল আফরোজা বেগম বলেন, দখলদাররা গত ১১ নভেম্বর হাই কোর্টে থেকে স্থিতি অবস্থা জারী করিয়েছিল কিন্ত ১৩ ডিসেম্বর একই কোর্ট উক্ত আদেশ ভেকেট করে সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছে তাই আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মান কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, উঠতি ফসল মালিকদের বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরন দেওয়ার জন্য আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি।
নিউজরুম