বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রচারণার সঙ্গে আমরা সুপরিচিত। কিন্তু দেশের আমলাতন্ত্র যে ভয়াবহভাবে প্রতিবন্ধীবিরূপ, তা আবারও প্রমাণিত হলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বপন চৌকিদারের ঘটনায়।
আমলাতন্ত্রের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে এবার বিসিএস পরীক্ষা দিতে বসেন স্বপন।প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষা দিতে শুরু করেন তিনি।দুটি পরীক্ষা অসাধারণভাবে সম্পন্নও করেন। কিন্তু আবার আমলাতন্ত্র তাঁকে নিচে টেনে ধরতে চাইল, তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা দিল। শ্রুতলেখকের সমস্যা নিয়ে আমলাতন্ত্রের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি স্বপন। রাষ্ট্রপ্রদত্ত ক্ষমতার খড়্গে স্বপনের স্বপ্ন বলি হয়েই গিয়েছিল প্রায়। উচ্চ আদালতে শীতকালীন ছুটি, পরীক্ষা চলমান, স্বপন অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন, কিন্তু কেউই তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসেননি। আর এ মুহূর্তে এগিয়ে এল প্রথম আলো। প্রথম আলোর প্রতিবেদক শরিফুল হাসান ঘটনাটি প্রকাশ করে দেশবাসীর বিবেক নাড়িয়ে দেন। কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে, আবার স্বপন পরীক্ষায় বসেন। থেমে যাওয়া তাঁর স্বপ্নের রথ সচল করে দেয় প্রথম আলো। টানা তিন দিন প্রথম পাতায়, সম্পাদকীয়তে আর ফলোআপ করে লড়াকু বীর স্বপনের স্বপ্ন জয়ের পথে সারথি হলো ‘বদলে যাও বদলে দাও’ শপথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আলো ছড়িয়ে চলা প্রথম আলো। অবাক লাগে, আমলাতন্ত্রের ছিঁচকেপনা দেখে; আরও কষ্ট পেতে হয় যে স্বপনকে অনেকেই চেনেন, সেই চেনা অনেকেই প্রথম আলোর মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন পড়েও স্বপনকে সহানুভূতি জানাননি। একটিবার বলেননি—ভাই স্বপন, তোমার বুঝি খুব কষ্ট হলো! আসলে আমাদের আমলাতন্ত্রের মতোই মানবিক অনুভূতিগুলো হয়তো খুব ভোঁতা! তবে তাতে স্বপনের কিছু যায়-আসে না। তাঁর স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না। স্বপনের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো, যা একটি কাগজের পত্রিকা হয়েও আমাদের চেয়েও অনেক অনেক বেশি মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন। ধন্যবাদ প্রতিবেদক শরিফুল হাসান, ধন্যবাদ প্রথম আলো। এভাবেই আপনারা থাকুন সবার পাশে।
সাব্বির এ. মুকীম
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
samukim1@gmail.com
মানবাধিকার কমিশন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, সঠিক বিচার না পাওয়া, নারী-শিশু নির্যাতন ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না।কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই গঠিত হয়েছিল জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
কমিশন কর্তৃপক্ষ বলে অর্থ ও লোকবলের অভাবে কমিশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। কমিশনকে স্বাধীন এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সরকার সহযোগিতা করছে কি না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
মানবাধিকার কমিশন এ পর্যন্ত জনগণের মানবাধিকার রক্ষার জন্য দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি, যা দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করার মতো। কমিশনের চেয়ারম্যান বক্তৃতা-বিবৃতিতে যেভাবে উচ্চকিত, বাস্তবে কমিশনের ভূমিকা ততটা কার্যকর নয়।
একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানবাধিকার কমিশন যেন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়। সে রকম ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত ও আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনকে যেন বাধাগ্রস্ত না করা হয়, তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে কি গতানুগতিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে? আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই।
মাহতাব আলী
মিরপুর, ঢাকা।
আমরা আতঙ্কিত
বিশ্বজিৎ হত্যাকারীরা ধরা পড়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিচার-প্রক্রিয়া চলছে। আমরা কেউ জানি না, তাদের অপরাধের শাস্তি তারা পাবে কি না।
কারণ, এই দেশে বিচারে বিশ্বাস নেই। এখানে অপরাধীর শাস্তি ভোগ করতে হয় না। অতীত ইতিহাস তা-ই বলে। হয়তো পত্রপত্রিকায় যত দিন খবরটি প্রকাশিত হবে, তত দিন এটি সজীব থাকবে, তারপর ধীরে ধীরে সবাই ভুলে যাবে নতুন খবরের আগমনে। পত্রপত্রিকা ব্যস্ত হবে অন্য খবর নিয়ে, সেই সঙ্গে বিচারের ফাইলটিও চাপা পড়বে অন্য ফাইলের নিচে। কিন্তু আমরা যারা বিশ্বজিতের মতো ২৪ বছরের সাধারণ যুবক আছি, যারা রাজনীতি বুঝি না, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও শিবির বুঝি না, যারা কাপড় সেলাই করি, পড়াশোনা করি, তাদের কী হবে?
বিশ্বজিৎ মরে গিয়ে মৃত্যুশঙ্কা থেকে বেঁচে গেছেন কিন্তু আমরা? আমাদের চোখের সামনে ভাসছে লাল রক্তে ভেজা বিশ্বজিতের বেঁচে থাকার করজোড় চিৎকার—আমি রাজনীতি করি না, ছাত্রদল, শিবির করি না। আমি দর্জিখানায় কাজ করি।
আবু বকর সিদ্দিক, আরাফাত, রিমন, নাহিদ, লতিফ, আহসান, সালাউদ্দিন
রংপুর।
শিল্পবর্জ্য নিষ্কাশন
তৈরি পোশাকশিল্প একটি উল্লেখযোগ্য খাত। এই খাতের সঙ্গে দেশের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ সংশ্লিষ্ট। এই খাত বেশ লাভজনক। তবে আরও বেশি লাভজনক হতো, যদি এর বর্জ্য নিষ্কাশন সঠিকভাবে করা হতো। বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্কাশন না করার ফলে এগুলো নদী-নালা, খাল-বিলে গিয়ে ফসলি জমিসহ ও পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এগুলো বন্ধ করা যায় কীভাবে, সে ব্যাপারেও ভাবা হচ্ছে বলে মনে হয় না।
মাঝেমধ্যে খবরের কাগজে দেখা যায়, বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন না করার কারণে জরিমানা করা হচ্ছে। শুধু জরিমানা করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আরও কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ নিতে হবে, এমনকি কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত না করে কলকারখানা চালানো যায় না, এটি আইনেই রয়েছে। এখন প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং তা নিশ্চিত করা।
মো. আরফাদুল ইসলাম
ঢাকা।