বিয়ে ভেঙে গেল, দায় কি মেয়ের?

0
428
Print Friendly, PDF & Email

তৌহিদা শিরোপা(২৬ডিসেম্বর): সাজ সাজ আয়োজনবাড়িজুড়ে বিয়ের তোড়জোড়হঠা খবরটি কানে এল, ছেলের নাকি অন্য কোনো সম্পর্ক আছেমুরব্বিদের গুরুগম্ভীর আলোচনাসিদ্ধান্ত হলো, এ বিয়ে হবে নাহইহুল্লোড়ে ভরা বাড়িতে নেমে এল সুনসান নীরবতাপুরো ঘটনায় কোনো ভূমিকা না রেখেও বিয়ের কনেকে বিয়ে ভাঙার দায় নিতে হলোসব জায়গায় তাঁকে নিয়ে আলোচনাএমনকি পরিবারের সবার মধ্যেও একা হয়ে গেলেন মেয়েটিমনে মনে ভাবেন, কী দোষ আমার? শেষ পর্যন্ত এই বিয়ে না হওয়ার দায় কেন আমার? এর উত্তর মেলে না
এটি কোনো গল্প নয়অনসুয়া নামের মেয়েটির জীবনের গল্প এটিএকটা সময় কাছের মানুষের আচরণ সহ্য করতে না পেরে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেনপরিবার-পরিজন ছেড়ে এসে বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি মহিলা হোস্টেলের সুপারভাইজর হিসেবে কাজ করছেনজানান, সবকিছু পেছনে ফেলে তিনি ভালো আছেন
শুধু পারিবারিকভাবে সম্বন্ধ করা বিয়েতেই এমন হয় আর প্রেমের বিয়েতে এমন হয় না, বিষয়টি তেমন নয়স্কুল জীবন থেকেই একসঙ্গে লেখাপড়া করেছেন সোহেলী-শরিফ (ছদ্মনাম)পাশাপাশি বাড়িতে বেড়ে ওঠাসহপাঠী হয়ে গেলেন বন্ধুবন্ধুত্ব থেকে প্রেমদুই পরিবারের সম্মতিও ছিলএকসময় ছেলে-মেয়ে দুজনেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেনবিয়ের কথাবার্তাও হচ্ছেকিন্তু তাঁরা বুঝতে পারলেন, তাঁদের এই দীর্ঘ সম্পর্কের পরিণতি না ঘটাই ভালোতাঁদের পারস্পরিক বোঝাপড়া আগের মতো নেইদুজনের মতবিরোধ হচ্ছেসম্পর্ক ভালো রাখার জন্য কেউ কাউকে ছাড় দিতে পারছেন নাতাঁরা সিদ্ধান্তে এলেন, বিয়েটা না হওয়াই ভালোকিন্তু দুই পরিবারের কেউ বুঝতে চাইল না, এত দিনের সম্পর্কের পরও কেন বিয়ে করবেন না তাঁরা? তাহলে দোষটা কি সোহেলীর? চাকরি করতে গিয়ে অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েননি তো?
এমন প্রশ্ন শুধু শরিফের পরিবার নয়, সোহেলীর পরিবার থেকেও করা হলোআমরা বুঝতে পারছিলাম, এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে নাতাহলে কেন সেটিকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাব? আমরা দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েই সবাইকে জানিয়েছিলামকিন্তু সবাই এমন আচরণ করতে থাকল, যেন সব দোষ আমারসে সময় নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিলবলেন সোহেলীতাঁর মনের গহিন কোণে যে ব্যথার পাহাড়, সেটি কেউ বুঝতে পারল নাএত দিনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় তাঁর মনে কত কষ্ট, সেই খবর কেউ রাখল নাকষ্ট ভুলতে, সবার নেতিবাচক কথা থেকে বাঁচতে নিজের কাজে আরও বেশি মনোযোগী হলেন সোহেলী
সব মেয়ের মনোবল অনসুয়া কিংবা সোহেলীর মতো থাকে নাবিয়ে ভেঙে যাওয়া থেকে কেউ কেউ মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হনঅনেকে দ্বারস্থ হন মনোরোগ চিকিসক বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরতখন কী ধরনের পরামর্শ দেন তাঁরা? এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ বলেন, যেকোনো কারণেই বিয়ে ভেঙে যেতে পারেসাময়িক কষ্ট হলেও এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না; যদি না মেয়েটির পরিবার তাঁকে সব ধরনের সর্মথন দেয় এবং সহযোগিতা করেবিপর্যস্ত মেয়েটিকে শুধু নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি বোঝাতে হবে
আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছেকিন্তু একটা দায় মেয়েটির ওপরই পড়েঅনেক সময় মেয়ের পরিবারকেও সামাজিকভাবে হেয় করা হয়চেনাজানা দুটি মানুষের মধ্যে মতের অমিল, অহংবোধ কিংবা ভালো না লাগা কাজ করতেই পারেআবার সম্বন্ধের বিয়েতে পানচিনির (বাগদান) অনুষ্ঠানের পরও কারও কোনো নেতিবাচক মন্তব্য, কোনো উড়ো খবর বা গোপন কোনো খবরে শেষ অবধি বিয়ের সানাই বাজল না; কিংবা দুই পরিবারের ভুল বোঝাবুঝিতেও ভেঙে যায় বিয়েসেই দায়ভার সমাজ বা পরিবার থেকে মেয়েটির ওপর চাপিয়ে তারা যেন নিজেদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করে
প্রায় ২২ বছর ধরে বিয়ের সম্বন্ধকারী প্রতিষ্ঠান মনিকাস বাঁধনপরিচালনা করছেন মনিকা পারভীনতাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মনে করেন, সমাজে মেয়েরা এমনিতেই নাজুক অবস্থায় থাকেনতাঁদের এটি নিয়ে আর হেয় করা উচিত নয়একটা বিয়ে শেষ পর্যন্ত না হতেই পারেসেটাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে
বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় মেয়েটির মানসিক অবস্থা ভালো থাকে নাস্বপ্নভঙ্গের চাপে এমনিতেই কুঁকড়ে যানতাঁকে সেই মুহূর্তে আর কোনো বাড়তি চাপের মধ্যে ফেলা উচিত নয়একটি সম্পর্কের ভাঙনের সঙ্গে মেয়েদের জীবনের সব শেষ হতে পারে নাঅনেকে লোকলজ্জার কথা ভেবে তাক্ষণিকভাবে আবার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেনএটিও ঠিক নয়; বরং মেয়েটিকে সে সময় নিজের মতো করে থাকতে দেওয়া উচিততাঁকে মানসিকভাবে সমর্থন দিতে হবেসময় দিতে হবেযেকোনো কাজে মেয়েটি যেন ব্যস্ত থাকেন, সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবেতাঁকে বোঝাতে হবে, এমনটা হতেই পারেজীবনে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত সময় আসেসেসব জোরালোভাবে মোকাবিলা করতে হবেআর এসব দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকেইআত্মীয়স্বজন কিছু বললেও সেদিকে কর্ণপাত না করে মেয়েটির পাশে থাকতে হবে সবারবিশেষজ্ঞরা এমনটিই মনে করেন

 

 

 

শেয়ার করুন