ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(২৬ডিসেম্বর): বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম কমে গেলে দেশের খোলা বাজারেও তেলের দাম কিছুটা কমে। আবার বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়ে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে নড়চড় দেখা যায় না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই দাম আরও বাড়িয়ে দেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীরা।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের নিত্যপণ্যের বাজার তদারক শেল দেখেছে, দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা মালিকেরা বোতলের দাম অযৌক্তিকভাবে বেশি রাখছেন। এতে ঠকছেন ক্রেতারা।
ট্যারিফ কমিশন বলছে, এক লিটারের বোতলজাত তেলে বোতলের জন্য ব্যয় হয় সাত টাকা ১২ পয়সা। আর পাঁচ লিটারের বোতলের ব্যয় ২৪ টাকা ৮৬ পয়সা। অন্যদিকে পরিশোধনকারী কারখানাগুলো বলছে, এক লিটারের বোতলে তাদের খরচ হয় ১৫ টাকা আর পাঁচ লিটারে খরচ হয় ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
দেখা যাচ্ছে, পরিশোধনকারীরা এক লিটারের বোতলের দাম হিসাবে সাত টাকা ৮৮ পয়সা এবং পাঁচ লিটারের বোতলে ২৩ টাকা ১৪ পয়সা থেকে ২৫ টাকা ১৪ পয়সা বেশি নিচ্ছেন।
বোতলের দাম বেশি নেওয়ার জাঁতাকলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমানে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৩৫ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম ৬৬০ থেকে ৬৭০ টাকা। বোতলের দাম বেশি রাখা না হলে এক লিটারের তেল ১২৭ টাকা ১২ পয়সা আর পাঁচ লিটারের তেল ৬৩৬ থেকে ৬৪৪ টাকায় কিনতে পারতেন ক্রেতারা।
ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের বোতলের মূল্য পাঁচ টাকা, দুই লিটারের বোতলের মূল্য ১২ টাকা ৬৬ পয়সা, তিন লিটারের বোতলের মূল্য ১৯ টাকা ৭৪ পয়সা হয়। এক ও পাঁচ লিটারের মূল্য আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন মনে করে, বোতলের এই মূল্য বাস্তবায়ন করতে পারলে বোতলজাত ভোজ্যতেলের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
তবে বোতলের দাম নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওদেরকে (ট্যারিফ কমিশন) ওই দামে বোতল সরবরাহ করতে বলেন। তাহলে আমাদের খরচও কমবে।’ তাঁর দাবি লেবেল, মূসকসহ যাবতীয় খরচ ধরলে এক লিটারের বোতলের খরচ দাঁড়ায় ১৫ টাকা।আর পাঁচ লিটারের বোতলের খরচ পড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।
পরিবেশক প্রথার আওতায় ভোজ্যতেলের দাম প্রথম নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ২০ জুলাই। ওই সময় প্রতি লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২১ টাকা।এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সাত দফায় লিটারে ১৪ টাকা দাম বাড়ায় পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু একবারও বোতলজাত তেলের দাম কমায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো।
বেশি মুনাফা: ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে পরিশোধনকারীরা বোতলজাত তেলের দাম বেশিই নিচ্ছেন। তবে পরিশোধনকারীদের ব্যয় অনুযায়ী হিসাব করে দেখা যায় যে বোতলজাত তেলে তাঁরা অনেক বেশি পরিমাণ মুনাফা করছেন।
পরিবেশক প্রথা অনুযায়ী, বোতলজাত ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে তেলের মিলগেট দর এবং বোতলের ব্যয় যোগ করে খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
ট্যারিফ কমিশন ও পরিশোধনকারী কারখানা সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর মাসে এক লিটারের খোলা সয়াবিন তেলের মিলগেট মূল্য ছিল ১১৪ টাকা।
সে ক্ষেত্রে পরিশোধনকারীদের দাবি অনুযায়ী, এক লিটারের বোতলজাত তেলের দাম হওয়া উচিত ১২৯ (১১৪ টাকা তেল এবং ১৫ টাকা বোতলের খরচ) টাকা। কিন্তু এক লিটারের বোতলজাত তেল কোনো দোকানেই ১৩৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ একে তো বোতলের দাম সাত টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছেই, তার ওপর পরিশোধনকারীরা মুনাফা করছেন ছয় টাকা।
একইভাবে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম হওয়া উচিত ৬২০ (১১৪ +৫০) টাকা। অথচ, ক্রেতার কাছ থেকে এই তেলের দাম নেওয়া হচ্ছে ৬৬০ থেকে ৬৭০ টাকা। অর্থাৎ, ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি। আর ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী পরিশোধনকারীরা পাঁচ লিটারের বোতলে ক্রেতার কাছ থেকে ২৪ টাকা বাড়তি নিচ্ছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনটি পেয়ে বাণিজ্যসচিব এসব বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে একটি সভা ডাকার কথা বলেছেন।
নিউজরুম