স্পোর্টস ডেস্ক(২৬ডিসেম্বর): সজোরে ব্যাট চালালেন। বল গিয়ে আছড়ে পড়ল সাইট স্ক্রিনে। খ্যাপা ষাঁড়কে কাবুকরার পর ম্যাটাডোরের উদ্যাপন ভঙ্গির মতো এক হাঁটু ভাঁজ করে শূন্যে ঘুষিপাকালেন শোয়েব মালিক। ভারতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা এখন অন্যরকম। সানিয়ামির্জাকে বিয়ে করে এই দেশের ‘জামাই’ হয়ে গেছেন। কিন্তু সানিয়াকে বিয়ের পরএই প্রথম ভারতে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেই শ্বশুরবাড়ির লোকদের খেপিয়েতোলার কাজই করলেন।
শেষ তিন বলে ছয় লাগে এমন পরিস্থিতিতে ওই ছক্কাটাহাঁকিয়েছেন বলেই নয়; তাঁর অপরাজিত ৫৭, দলকে সমূহ বিপদ থেকে উদ্ধার করাহাফিজের সঙ্গে শত রানের জুটিই উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে পাকিস্তানকে জেতাল ৫উইকেটে। এই প্রথম ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জিতল পাকিস্তান। শেষপর্যন্ত এক দলের মুখেই থাকল হাসি। তবে ম্যাচের পাল্লা কখনো ভারত, কখনোপাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ার উত্থান-পতনে জমজমাট একটা সিরিজেরই পূর্বাভাসমিলল প্রথম ম্যাচেই।
কেমন উত্থান-পতন হয়েছে? ম্যাচ না দেখে থাকলে বলেবোঝানো মুশকিল। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৭ রান তুলে ফেলল প্রথমে ব্যাট করতেনামা ভারত। গম্ভীর-রাহানের উদ্বোধনী জুটি দিল বড় স্কোর গড়ার ইঙ্গিত। কিন্তুভারত আটকে গেল পাকিস্তানের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে। ১৭০-১৮০ যেখানেঅনায়াসে সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল, সেখানে ৯ উইকেটে ১৩৩-এই থেমে গেল ধোনির দল।
পাকিস্তানিবোলারদের প্রত্যাবর্তন বোঝা যাবে এখান থেকেও: শুরুর ৭৭ রানের পর ভারতেরদ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটিটা মাত্র ১৩ রানের। তৃতীয় উইকেটের পর দুই অঙ্ক ছোঁয়াজুটি হলো না একটিও! ঘুরে দাঁড়ানোর এই লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন উমরগুল। প্রথম ওভারে ১৩ রান দিয়ে ফেলার পরও পরের দুই ওভারে ৮ রান দিয়ে নিলেন ৩উইকেট। ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সফল বোলারও তিনি।
চিন্নাস্বামীরব্যাটিং উইকেটে তিন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে এই পুঁজিতে প্রতিপক্ষকে আটকানোদুরূহ। সাধারণ হিসাব এটাই বলবে। কিন্তু লড়াইটা যখন ভারত-পাকিস্তানের, সাধারণ হিসেব-নিকেশ যে সেখানে খাটে না! লড়াই অনন্ত চাপের, ক্রিকেটীয় সমীকরণঅনেকটাই পাল্টে দেয় যে চাপ।
অভিষিক্ত ভুবনেশ্বর কুমারের সৌজন্যে বলহাতে ভারতের শুরুটা হলো দুর্দান্ত। ভেতরে ঢোকা দারুণ দুটি বলে উড়িয়েছেননাসির জামশেদ (২) ও উমর আকমলের (০) স্টাম্প। আহমেদ শেহজাদকে (৫) ক্যাচবানিয়েছেন ধোনি। মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন রীতিমতোকাঁপছে। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অবধারিত সঙ্গী চাপকে বিবেচনায় নিলে ১৩৪রানের লক্ষ্যটাকেও মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ।
সেখান থেকেই অধিনায়কোচিতএক ইনিংস খেললেন মোহাম্মদ হাফিজ। ‘খেললেন’ নন-স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকেওমালিককে পথ দেখিয়ে। চতুর্থ উইকেটে দুজনে গড়ে তুললেন পাকিস্তানের রেকর্ড ১০৬রানের জুটি। দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেপাকিস্তানের পরাজয়ে বড় ‘ভূমিকা’ রেখেছিলেন। হাফিজ যেন সেই কলঙ্ক মোচনই করতেচেয়েছিলেন দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে। শেষ তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান চাই, হাতেসাত উইকেট। হাফিজ ৬১ রানে অপরাজিত, ফিফটির কাছাকাছি ‘জামাই’ও। মনে হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত উত্তেজনাহীন একটা ম্যাচই হয়তো হবে। কিন্তু লড়াইটা যে ভারতবনাম পাকিস্তান!
১৮তম ওভারের প্রথম বলে হাফিজকে ফেরালেন ইশান্ত। চতুর্থবলেও মালিককে ফিরিয়েই দিয়েছিলেন। জাদেজা ঠিকমতো ক্যাচ নিলেও একই ওভারেরদ্বিতীয় বাউন্সারের নো বাঁচিয়ে দিল মালিককে। এতটাই উত্তেজনা ছড়াল মাঠে, কামরান আর ইশান্ত দুজনের দিকে মারমুখী ভঙ্গিতে তেড়েও গেলেন! শেষ পর্যন্তবেঁচে যাওয়া মালিকই বের করে আনলেন ম্যাচ।
২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি দেখতে ভুলবেন না যেন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত:২০ ওভারে ১৩৩/৯ (গম্ভীর ৪৩, রাহানে ৪২, কোহলি ৯, যুবরাজ ১০, ধোনি ১, রায়না১০, রোহিত ২, জাদেজা ২, ভুবনেশ্বর ৬*, ইশান্ত ০, দিন্দা ৩*, গুল ৩/২১, আজমল ২/২৫, ইরফান ১/২৫, আফ্রিদি ১/২৬)
পাকিস্তান: ১৯.৪ ওভারে ১৩৪/৫ (জামশেদ ২, শেহজাদ ৫, হাফিজ ৬১, উমর ০, মালিক ৫৭*, কামরান ১, আফ্রিদি ৩*; ভুবনেশ্বর ৩/৯, দিন্দা ১/২৬, ইশান্ত ১/২৩, কোহলি ০/২১, যুবরাজ ০/২৫, জাদেজা০/২৯ )।
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ হাফিজ
নিউজরুম