চট্রগ্রাম (২৫ ডিসেম্বর) : বিরোধী দলকে সংসদে এসে নির্বাচনের রূপরেখা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ নির্ধারিত সময়ের পাঁচ বছর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে চতুর্থবারের মতো উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে মোশাররফ হোসেন ও এম এ সালাম।
বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নব্বইয়ের পর বাংলাদেশে অনেক হরতাল হয়েছে। হরতাল করে সরকার পতন হয় না। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন হবেই। সবার অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হবে। হরতাল দিয়ে দুর্ভোগ না বাড়িয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এসে নির্বাচনের রূপরেখা দিন। আমরাও চাই সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে যেতে। সংঘাত চাই না। ফাঁকা মাঠে গোলও দিতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিছু লোক ক্ষমতার দাপট দেখান। যাঁরা ক্ষমতার দাপট দেখান, তাঁরা হাইব্রিড আওয়ামী লীগ। দলটাকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করবেন না। আদর্শ, মূল্যবোধ ও ঐক্য না থাকলে রাজনীতি থাকে না।’
আগামী বছরের জুন পর্যন্ত মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদ্যুত্ পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা ও রাস্তাঘাটের অবস্থা সহনীয় পর্যায়ে আনাই লক্ষ্য। যদি লক্ষ্য পূরণ করে জনগণকে স্বস্তি দিতে পারি, তবে আগামী নির্বাচনে আবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসতে পারব।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীরা পাকিস্তানি রাজনীতির ধারকবাহক। আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়ে পাকিস্তানের টাকা নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চান। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সেই দেশের আদালতে এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
বিশ্বজিত্ দাশের হত্যাকাণ্ডকে অমানবিক উল্লেখ করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘টেলিভিশনে ঘটনা দেখে মন ব্যথায় ভরে গেছে। সেই রাতে ঘুমাতে পারিনি। এই নৃশংসতা মেনে নেওয়া যায় না। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাংসদ এ বি এম আবুল কাশেম, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন আহমেদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম।
সভাপতি মোশাররফ, সাধারণ সম্পাদক সালাম: আজ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য সভাপতি পদে মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে এম এ সালাম নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ১৮ বছর ধরে তাঁরা এই দুই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাবকারী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমি দুজনের নাম প্রস্তাব করার পর কাউন্সিলররা হাত তুলে সম্মতি জানালে সর্বসম্মতিতে তাঁরা নির্বাচিত হন। দু-এক দিনের মধ্যে ৭১ সদস্যের কমিটির অন্য সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।’
১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি ভেঙে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ হিসেবে নতুন সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন এম এ হান্নান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ মান্নান।
১৯৯৪ সালে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রথমবার এই দুই পদে নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৮ ও সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত দুই সম্মেলনেও তাঁরা একই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নিউজরুম