কৃষি ডেস্ক (২৫ডিসেম্বর):
মুল্য বিপর্যয়ের কারনে নাটোরে চাষীরা রসুন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। গত দু’মৌসুমে উৎপাদিত রসুনের ন্যায্যমুল্য না পাওয়ায় চাষীরা রসুন চাষে অনাগ্রহী হয়ে অন্য ফসলে ঝুঁকে পড়ছে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অফিস সুত্রে জানা যায়,১৯৯০ সালের দিকে নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার নিন্মাঞ্চলে স্থানীয় কৃষকদের উদ্ভাবিত বিনা হালে রসুন চাষ শুরু হয়। ভুমির উর্বরতা ও কৃষকদের একনিষ্ঠ পরিশ্রমের ফলে বিগত বছরগুলোতে নিজেদের উদ্ভাবিত বিনা হালে রসুন চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় রসুন চাষে দেশে শ্বেত বিপ্লব ঘটে। নাটোর জেলায় সারাদেশের মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ রসুন উৎপাদিত হয় । গত ২০১১-১২ মৌসুমে জেলায় ১৮ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়। কিন্তু মুল্য পির্যয়ের কারনে চাষীরা রসুন আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। চলতি ২০১২-১৩ মৌসুমে জেলায় রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয় ১৯ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। গত এক বছরে ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ কমেছে ।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক দশক ধরে জেলার গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম এলাকায় কৃষকরা বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর বিনা চাষে কাদা মাটিতে রসুনের আবাদ করে আসছে। জমি শুকানোর জন্য কৃষকদেরকে আর অপেক্ষায় থাকতে হয় না। বিনা হালেই কৃষকরা জমিতে রসুনের বীজ রোপন করে।এতে খরচ ও সময় কম লাগে। বন্যার পলি পড়া মাটিতে রসুনের ফলন ভাল হয়। রোগ বালাই ও পোকার আক্রমন তেমন হয় না । প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২৫ থেকে ৩৫ মন। খরচ হয় কমবেশি ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় এক থেকে সোয়া লাখ টাকা। গত ২০১০-১১মৌসুমে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা মন দরে রসুন বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার তা নেমে গিয়ে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫শ টাকা মন দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে তা ৭ থেকে ৮শ’ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে রসুনের মূল্য কম হওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়ে। রসুনের লাভজনক মুল্য না পাওয়ায় এবং বিক্রি না করায় অনেকের ঘরে রসুন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। মুল্য ধসের কারনে বড়াইগ্রাম এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে রসুন চাষীরা সরকারের কাছে লাভজনক মূল্য নির্ধারনের দাবীতে আন্দোলনে নামে। রসুনের এই মুল্য বিপর্যয়ের কারনে অনেক কৃষক এবার তাদের জমিতে রসুন চাষ না করে গম আবাদ করেছেন। বড়াইগ্রামের নজরুল ইসলাম জানান,অন্যান্য বছরে তিনি ৪ থেকে ৫ বিঘা জমিতে রসুন আবাদ করেন। দাম না থাকায় এবার এক বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রহমত উল্লাহ জানান, মুল্য কম থাকায় আবাদ কিছুটা কম হলেও এবারও রসুনের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। একারনে অনেক কৃষক রসুন আবাদের পরিবর্তে গম,মসুর ও ভুট্টা সহ অন্য ফসলের চাষাবাদ করছেন।
নিউজরুম