আর্ন্তজাতিক ডেস্ক (২৫ ডিসেম্বর): নয়াদিল্লির রাজপথে চলন্ত বাসের মধ্যে ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে ভারতের জনগণ। রাজধানী দিল্লি ছাড়াও ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে কলকাতা, গুয়াহাটি, লক্ষৌ, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ও কানপুরের মতো বড় বড় শহরে।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষও বাধছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দিল্লির বিভিন্ন বিপণিবিতান ও মেট্রোরেল স্টেশন। ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল সোমবার লিখেছে, ‘দুর্গনগরে পরিণত হয়েছে নয়াদিল্লি।
এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি বলেছেন, ‘আমারও তিনটি মেয়ে আছে। কাজেই এ ঘটনা আপনাদের মতো আমার মনকেও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এ ধরনের ভয়ানক ঘটনার প্রতিবাদে এই গণবিক্ষোভ “যথার্থ” ও “যৌক্তিক”। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সহিংসতা কোনো সমাধান বয়ে আনে না।’ মনমোহন সিং বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ ঘটনার যথাযথ আইনি নিষ্পত্তি ঘটাব। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, এ ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।’ দেশবাসীকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ওই ছাত্রীর পাশে আছে। তাঁর সার্বক্ষণিক চিকিৎসা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুধু এ ঘটনাই নয়, নারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে কেন বিলম্ব হয়, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।’
১৬ ডিসেম্বর রাতে গণধর্ষণের শিকার ২৩ বছর বয়সী ওই মেডিকেল ছাত্রীর অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।
চলছে বিক্ষোভ: গণঘর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল নয়াদিল্লির যন্তর মন্তর এলাকায় হাজারও মানুষ বিক্ষোভ করে। এর আগের দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ ইন্ডিয়া গেটের কাছে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দিন থেকে ইন্ডিয়া গেট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ইন্ডিয়া গেট ও রাইসিনা হিলস এলাকায় সড়কপথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের এসব এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ব্যস্ততম নয়টি মেট্রোরেল স্টেশন।
পুতিন-মনমোহন বৈঠকের স্থান পরিবর্তন: দিল্লিতে গণবিক্ষোভ এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গতকাল সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মনমোহনের বৈঠকের স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল হায়দরাবাদ হাউসে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হয়, বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।
এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযোগপত্র: ধর্ষণের ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ করতে দ্রুত বিচার আদালত গঠনের জন্য দিল্লি হাইকোর্টকে অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। দিল্লি পুলিশ গতকাল বলেছে, এক সপ্তাহের মধ্যে তারা ছয়জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করবে।
কারাগারে আসামিকে পিটুনি: ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছয়জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রধান অভিযুক্ত রাম সিংসহ চারজনকে রাখা হয়েছে দিল্লির তিহার কারাগারের সেলে।তিহার কারাগারের ক্ষুব্ধ কয়েদিরা গতকাল রাম সিংকে পিটিয়েছেন। আর আইনি হেফাজতে থাকা মুকেশকে কয়েদিরা পিটিয়েছে আগেই। এ ছাড়া তাঁকে মানুষের মলমূত্র খেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৬ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ দিল্লিতে চলন্ত বাসের মধ্যে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ছয়জন।
স্ত্রীকে ধর্ষণ অপরাধনয়: মেডিকেলছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনার মাত্র ১২ দিন আগে ভারতের পার্লামেন্টে একটি বিল আনা হয়েছে। ওই বিলে বলা হয়েছে, বিয়ের পর কোনো পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
১৮৬০ সালে বলবৎ করা একটি আইনের সামান্য পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এই বিলে। ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের (আইপিসি) ২৭৫ ও ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী, বিয়ের পর স্ত্রীকে ধর্ষণ করা অপরাধ নয়। তবে স্ত্রীর বয়স ১৫ বছরের কম হলে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনায় করা হবে। নতুন বিলে এই বয়স এক বছর বাড়িয়ে ১৬ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাত বছরের বদলে অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নিউজরুম