আমাদের কৌতূহল

0
482
Print Friendly, PDF & Email

সাহিত্য ডেস্ক(২৫ডিসেম্বর)

 

: বিখ্যাতব্যক্তিদের নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেইমাঝে মধ্যে তাদের সম্পর্কে এমনঅনেক ঘটনা প্রচারিত হয় যার কিছুটা হয়তো সত্যি, বেশিরভাগই অতিরঞ্জনআলবার্টআইনস্টাইন সম্পর্কেও সে রকম অনেক কথা প্রচলিত আছেসর্বকালের অন্যতম সেরা এবিজ্ঞানীর জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চতিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৫৫ সালের ১৮এপ্রিলআইনস্টাইনকে নিয়ে অনেক মজার এবং অতিরঞ্জিত কথা প্রচলিত রয়েছেযেগুলোর বেশিরভাগই সত্য নয়যেমন- জন্মের সময় নাকি আইনস্টাইনের মাথা ছিলস্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বড়জন্মের সময় শিশুর মাথার আকার ছোট-বড় হতেইপারেআইনস্টাইনের মাথার সাইজের মাথা নিয়ে অনেক শিশু জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিনতাদের সবাই যে আইনস্টাইন হচ্ছে, তা নয়আলবার্ট অনেক দেরিতে কথা বলতে শুরুকরেছিলেন- এ প্রসঙ্গেও নানা রকম তথ্য পাওয়া যায়অনেকে বলেন, আইনস্টাইনকথা বলতে শুরু করেছেন চার বছর বয়সে, তাও একেবারে পূর্ণ বাক্য দিয়েএটাওঅতিরঞ্জনধারণাটি এ রকম আইনস্টাইন কথা বলতে শুরু করেন ৪ বছর বয়সে, তার আগপর্যন্ত তিনি কোনো কথা বলেননিএকদিন খাবার টেবিলে হঠা করেই নীরবতা ভেঙেবলে ওঠেন, স্যুপটা অনেক গরমতাকে কথা বলতে দেখে অবাক বিস্ময়ে তার বাবা-মাজানতে চান, কথা বলতে পারা সত্ত্বেও এতদিন তিনি কেন কথা বলেননিআইনস্টাইনেরজবাব, এতদিন কথা বলার প্রয়োজন পড়েনিউল্লেখ্য, প্রচলিত এ ধারণাটিএকেবারেই সঠিক নয়

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা লেখাপড়ায় সাধারণ মানের হলেআমরা অতি সাধারণরা তা খুব মনে রাখিআলবার্ট আইনস্টাইনও যে স্কুল-কলেজেরলেখাপড়ায় খুব একটা আহামরি কিছু ছিলেন না, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েভর্তি-পরীক্ষায় একবার ফেল করেছিলেন, তাও খুব যত্ন করে বিভিন্ন গণমাধ্যমেপ্রচারিত হয়দেখা যাক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কেমন করেছিলেনআইনস্টাইনআলবার্ট আইনস্টাইন ১৭ বছর বয়সে স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাসকরেন ক্যান্টন আরগাউ স্কুল থেকেতার স্ট্কুল পাসের সার্টিফিকেটে দেখা যায়, ক্যান্টন আরগাউ শিক্ষা বোর্ড এই মর্মে প্রত্যয়ন করছে যে, আলবার্টআইনস্টাইন আরগাউ ক্যান্টন স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর টেকনিক্যালকোর্সে অধ্যয়ন করেছেন১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮, ১৯, ২১ ও ৩০ তারিখেঅনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে তার প্রাপ্ত নম্বর জার্মান ৫, ফ্রেঞ্চ ৩, ইংরেজি ৫, ইতালিয়ান ৫, ইতিহাস ৬, ভূগোল ৪, গণিত ৬, জ্যামিতি ৬, বর্ণনামূলক জ্যামিতি ৬, পদার্থবিজ্ঞান ৬, রসায়ন ৫, প্রাকৃতীক ইতিহাস ৫ এবংশৈল্পিক অঙ্কন ৪তখনকার হিসাব মতে, কোনো বিষয়ে গ্রেড ৬ হলো সর্বোচ্চগ্রেডদেখা যাচ্ছে, আইনস্টাইন ভালো ছাত্রদের দলেই ছিলেনস্কুলে ইংরেজিভাষা তিনি পড়েননি কখনওবিদেশি ভাষা ফ্রেঞ্চ ও ইতালিয়ান পড়েছিলেনইতালিয়ানে ভালোই করেছিলেনফ্রেঞ্চ খুব একটা ভালো করেননিএ ছাড়া দেখাগেছে, পদার্থ, জ্যামিতি, বর্ণনামূলক জ্যামিতি, গণিতে ৬ গ্রেডের মধ্যে ৬পেয়েছিলেন তিনিসে হিসেবে এসব বিষয়ে কখনও দুর্বল ছাত্র ছিলেন নাআইনস্টাইনতবে স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন নাতিনিস্কুলের শিক্ষকরা মিলিটারি কায়দায় জোর করে মাথার ভেতর পড়ালেখাঢোকানোর চেষ্টা করবেন আর শিক্ষার্থীরা বাঁধ্য হয়ে শিক্ষকদের আদেশ-নিষেধমেনে চলবে- এটা তার কোনোদিনই ভালো লাগেনিনিজের বুদ্ধিবৃত্তির ওপর নির্ভরকরতে গিয়ে স্কুলে আলবার্টকে অনেক অপমান সইতে হয়েছেতাই স্কুলিং সিস্টেমেরওপরই তার আস্তা চলে গিয়েছিলশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদ লাভের জন্য প্রচলিতপরীক্ষা পদ্ধতির ঘোর বিরোধী ছিলেনকী রকম হওয়া উচিত পরীক্ষা পদ্ধতি? প্রশ্নের উত্তরে আইনস্টাইন বলেছিলেন, সারা বছর পাঠদানের পর শিক্ষার্থীরাএকটা থিসিস বা এ রকম কিছু লিখবে এবং তা দেখে ডিগ্রি দিয়ে দেওয়া হবেমজারব্যাপার হলো, আইনস্টাইনের এ পদ্ধতি আসলে কোনো কার্যকর পদ্ধতি ছিল নাতিনিসিস্টেমের বিরোধিতা করলেও নিজের পছন্দমতো কোনো সিস্টেম চালু করার তত্ত্বদিতে পারেননিএমনকি প্রথম জীবনে স্কুল শিক্ষকতা করেছিলেন

আইনস্টাইনেরঈশ্বর বিশ্বাস নিয়েও নানারকম মতবাদ চালু আছেঈশ্বর বিশ্বাসীরা যখন ধর্মেরসঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধ নেই প্রমাণ করতে চান কিংবা বলতে চান যে, বিজ্ঞানেধর্মের প্রয়োজন আছে তখন আইনস্টাইনের একটা বাক্য খুব প্রচার করেন আর তা হলো, ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান খোঁড়া আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধঅনেক কিছুর ব্যাপারেআইনস্টাইন খোলামেলা কথা বললেও ঈশ্বর বিশ্বাসের ব্যাপারে তিনি খোলাখুলিবলেননি তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, নাকি করেন নাতিনি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মেবিশ্বাস করেন না বলেছেন ঠিকই, কিন্তুু ইহুদি ধর্মের ব্যাপারে তিনি অনেককিছু করেছেনউচ্চমার্গের ঈশ্বর বিশ্বাস তার সবসময় ছিলআবার ধর্মের নামেমিলিটারি কায়দায় ধর্মের অনুশাসন মেনে চলার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনিঅনেকেইআইনস্টাইনকে থিওরি অব রিলেটিভিটির মূল স্রষ্টা বলে মনে করেনএটি একটি ভুলধারণাএই ধারণাটি আসলে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর বিভিন্ন সময়ের আবিষ্কার থেকেআস্তে আস্তে মানুষের সামনে আসতে থাকেতবু বিখ্যাত বিজ্ঞানী ম্যাক্সপ্ল্যাঙ্ক [১৯০৮ সালে] প্রথম এটি সম্পর্কে ধারণা দেনআইনস্টাইন তাকেবিস্তৃত করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেনআলো তরঙ্গ নাকি ইথার তা নিয়ে গবেষণারমধ্যেই লালিত হয়েছে এই থিওরি অব রিলেটিভিটিমজার কথা হলো, আইনস্টাইনকিন্তুু নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এই আলোক-তড়িক্রিয়া সম্পর্কিত বিষয় নিয়েগবেষণা করার জন্য১৯৩৯ সালে জার্মানিতে নাসি বাহিনীর উত্থানের সময়পদার্থবিদ লিও জিলার্ডের পরামর্শ মতে, পরমাণু বোমা গবেষণার জন্য মার্কিনপ্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে উসাহ দেন আইনস্টাইনতিনি সতর্ক করে বলেছেন, নাসিবাহিনীর তপরতা থামাতে পরমাণু বোমা আবিষ্কারের গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া উচিত

এতে তিনি সতর্ক করে দেন, জার্মানিতে নাসি বাহিনী এটি গবেষণা করতেপারে তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এটি নিয়ে গবেষণা করাএ চিঠিটিআইনস্টাইন লিখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এ চিঠি লেখার পর রুজভেল্ট পরমাণু বোমাবানানোর জন্য গোপন ম্যানহাটন প্রজেক্ট শুরু করলেও বোমা সফলভাবে আবিষ্কারকরা হয় পার্ল হারবারেতবে বিখ্যাত পদার্থবিদ হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে আইনস্টাইনকে মার্কিন সেনাবাহিনীর ওই প্রজেক্টে আমন্ত্রণজানায়নি মার্কিন সেনাবাহিনীঅথচ অনেকেই বলেন, ওই গবেষণায় সহায়তা করেছিলেনতিনিসুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেনতাইএকদিন মনরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এভাবে, ‘ চলুন না, আমরা বিয়েকরে ফেলি? তাহলে আমাদের সন্তানরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠসন্তানওরা দেখতে আমার মতো আর বুদ্ধিতে আপনার মতোআইনস্টাইন তক্ষণাবললেন, আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে আমার মতো আর বুদ্ধিতে আপনার মতো? বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত একটি কৌতুক এটিতবে এটিকে গুজব বলে মনে করা হয়তা জানেন না অনেকেইআপেক্ষিকতা তত্ত্বের মতো রহস্যময়তার মধ্যেই মৃত্যু ঘটেবিজ্ঞানী আইনস্টাইনেরতার মৃত্যুর সময় তিনি মাতৃভাষা জার্মানে কিছু একটাবলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেনতখন তার পাশে থাকা আমেরিকান নার্স কথাটিরবিন্দুবিসর্গও বুঝতে পারেননিএ ধারণার সপক্ষেও তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়াযায়নি

সংকলিত

 

শেয়ার করুন