স্পোর্টস ডেস্ক(২৫ ডিসেম্বর): ধরুন, বাংলাদেশ অধিনায়কের নাম হয়ে গেল ডক্টর মুশফিকুর রহিম। আপাতত সেটাহচ্ছে না কারণ, মুশফিক যদি কখনো সত্যি সত্যি পিএইচডি করেনও, তত দিন পর্যন্ততাঁর জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে বাংলাদেশ অধিনায়কেরইচ্ছা আছে, একদিন তিনিও পিএইচডি করবেন।
কৃতী ছাত্র হিসেবে মুশফিকেরপরিচয় আগেই জেনেছেন। সর্বশেষ খবর হলো, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি প্রথম শ্রেণী নিয়ে। স্নাতকেওপ্রথম শ্রেণী ছিল। এমন একজন ছাত্র আরও উচ্চশিক্ষায় মনোযোগী হতেই পারেন। কালবিসিবি অফিসে দাঁড়িয়ে মুশফিকও বলছিলেন, ‘একাডেমিক ডিগ্রি যে খেলায় খুববেশি সাহায্য করবে তা নয়। তবে এখান থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। আর এখানেইপড়াশোনা শেষ নয়। আশা করছি, ভবিষ্যতে এমবিএ বা পিএইচডিও করব।’ পেশাদারক্রিকেটার যেহেতু, ক্রিকেট নিয়ে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা মুশফিকের। এমনকিভবিষ্যতে শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে যদি ভালো কোনো চাকরিও পান, করবেন সেটাও, ‘ওরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে চাকরি না করার তো কিছু নেই।’
বাংলাদেশেরপ্রেক্ষাপটে খেলাধুলা আর পড়াশোনার অবস্থান বিপরীত মেরুতে। খেলা আর পড়াএকসঙ্গে হয় না, এটা তো অভিভাবকদের প্রিয় বুলিই ছিল একসময়। পরিবার থেকেদুটিতেই সমর্থন পেলেও কথাটা মুশফিককেও কম শুনতে হয়নি। কিন্তু কীভাবে তিনিমেলালেন দুই মেরুকে? মুশফিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন বন্ধু সহপাঠী এবংবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি, ‘আমার যতটা কৃতিত্ব, তার চেয়েবেশি কৃতিত্ব দেব আমার শিক্ষক আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের। তাঁদেরসহযোগিতা ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব হতো না। অনেক সময় ক্লাস করতে পারতাম না, বন্ধুদের নোট নিয়ে পড়তাম। অ্যাটেনডেন্সে সমস্যা হলেও স্যাররা আমাকে কনসিডারকরেছেন। আমাকেও কষ্ট করতে হয়েছে। তার পরও যখনই সময় পেয়েছি ক্লাস করেছি।’
পড়াশোনাশেষ করায় সবচেয়ে বড় প্রেরণাটা নিজের কাছ থেকেই পেয়েছেন মুশফিক। যা-ই করব, ভালোভাবে করব—এটাই তাঁর দর্শন। পড়া আর খেলা—দুটিতেই একসঙ্গে ভালো কিছু করেদেখানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাই মনে মনে। পরীক্ষার আগে আগে হয়তো অনেক সময়খেলতে বিদেশে চলে গেছেন। কফিনে ব্যাট-প্যাডের সঙ্গে তখন সঙ্গী হতোবই-খাতাও। অবসরের সময়টাতে অন্যরা যখন আড্ডা দিয়েছেন, মুশফিক ডুবে ছিলেনপাঠ্যবইয়ে। সতীর্থরাও বলতেন, ‘আড্ডা দিস না, পড়। তোর না পরীক্ষা!’ ‘বিশ্বাসকরবেন কি না জানি না, এমনও সময় গেছে যে আমি প্লেনে করে এসেছি পড়তে পড়তে।পরদিন পরীক্ষা…কেঁদেছি। এসব আত্মত্যাগের পর যে পড়াটা শেষ করতে পেরেছি, সেজন্যই বেশি ভালো লাগছে’—একটু যেন আবেগাপ্লুতই হয়ে পড়লেন বাংলাদেশ দলেরএমএ পাস অধিনায়ক।
খেলাধুলায় শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না। আবার এটাও ঠিক, পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে গোপন প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এই যোগ্যতা।সমবয়সী সতীর্থ এবং জুনিয়রদের প্রতিও তাই তাঁর পরামর্শ—পড়াশোনাটা ছেড়ো না, ‘এটা জীবনেরই অংশ। মানুষ হয়ে জন্মালে পড়াশোনা করতেই হবে। আমি মনে করি এটাঅনেক বড় বার্তা হবে সবার জন্য। এটা সত্যি, অনেক ছাড় দিতে হয়। তবে কেউ যদিপড়াশোনাটা করে, শেষ পর্যন্ত লাভটা নিজেরই। জুনিয়র যারা আছে তাদেরও বলিপড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে।’
ছেলের প্রতি আস্থা সব সময়ই আছে পরিবারের। তারপরও, খেলতে খেলতে ছেলে এমএ পাস করে ফেলায় একটু নাকি অবাকই হয়েছে মুশফিকেরাপরিবার। এখন তিনি পরিবারের ছোটদের কাছেও অনেক বড় উদাহরণ। ‘আমার মনে হতো, আমি যদি খেলার পাশাপাশি ভালোভাবে পড়াশোনা করি ছোট ভাইবোনেরাও বুঝবে ভাইয়াতো খেলে, তার পরও পড়ছে। আমরা কেন পারব না?’
‘ভাইয়া’ মুশফিকের পড়া এখনশেষ। পেশা হিসেবে যেহেতু খেলাটাকে আগেই বেছে নেওয়া আছে, বাকি রইল কেবলজীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা। ছোট ভাইবোনদের জন্য একজন ভাবি খুঁজে আনা।নতুন জীবনের স্বপ্ন এখন মুশফিকের চোখেও, ‘যেহেতু এখন সিঙ্গেল, অবশ্যই বিয়েকরার ইচ্ছা আছে। সময় হলেই সবাই জানতে পারবেন। সবাইকে জানিয়েই করব।’
এমএ পাস। দেখতে সুশ্রী। জাতীয় দলের অধিনায়ক। পাত্র হিসেবে মনে হয় খুব একটা খারাপ হবেন না মুশফিকুর রহিম।
নিউজরুম