আর্ন্তজাতিক ডেস্ক, (২4 ডিসেম্বর): ভারতের নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেলের ছাত্রী মুখখুলেছেন। পুলিশকে তিনি বলেছেন, ‘ওরা ছয়জন আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।এরপর আমাদের রাস্তার পাশে ছুড়ে ফেলে। সেখানে মূর্ছা যাই আমি।’
ওই ছাত্রীপুলিশকে বলেন, ‘যারা আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেআমি লড়াই করব। ধর্ষকদের অবশ্যই তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পেতে হবে।’
এদিকেগণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে নয়াদিল্লিসহ ভারতেরবিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববারও বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশনয়াদিল্লির রাইসিনা হিলস ও সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনের সামনে থেকেবিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে। পরে তাঁরা ইন্ডিয়া গেটে জড়ো হন। সেখানেপুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
ভারতের রাজধানীনয়াদিল্লির সাফদারজং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রী (২৩) গত শনিবার গভীররাতে পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীরঅবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
১৬ ডিসেম্বর রাতে চলন্ত বাসে ছয় ব্যক্তি ওইছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। পরে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গী ছেলেবন্ধুকে (২৮) রড দিয়েপিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে দেন। এ ঘটনায় জড়িত ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছেপুলিশ। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীও ওই ছাত্রীর বন্ধুর বক্তব্য নিয়েছে। দুজনের বক্তব্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশবলছে, ওই ছয়জন মাতাল অবস্থায় ছিলেন। একটি ফাঁকা বাসে চড়ে শহরে আনন্দভ্রমণেবেরিয়েছিলেন তাঁরা। বাসে তাঁরা ওই ছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান।
শনিবারগভীর রাতে একদল বিক্ষোভকারী ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের সভানেত্রী সোনিয়াগান্ধীর বাসভবনের সামনে জড়ো জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে সোনিয়া বেরিয়ে আসেন।বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি…আশা করি, ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।’ এর পরও বিক্ষোভকারীরা তাঁর বাসার সামনে থেকেসরেননি।
গতকাল আবার ছেলে রাহুল গান্ধীকে সঙ্গে নিয়ে সোনিয়াবিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন। কিন্তু এ সময় একদলবিক্ষোভকারী স্লোগান দেন, ‘হায়েনাদের ফাঁসি হোক, সোনিয়া নিপাত যাক’। এর পরইপুলিশ বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
বিক্ষোভ দমনে নয়াদিল্লিরপার্লামেন্ট ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কাছে গতকাল ১৪৪ধারা জারি করা হয়েছে। এসব এলাকায় পাঁচজনের বেশি জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাআরোপ করে পুলিশ। বড় ধরনের সমাবেশের আশঙ্কায় সাতটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করাহয়।
গতকাল বিকেলে ইন্ডিয়া গেটের কাছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন।একপর্যায়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদেরলাঠিপেটা করে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেলনিক্ষেপ করা হয়। জলকামানও ব্যবহার করা হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষহয়।
ফাঁসির ইঙ্গিত দিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসুশীল কুমার সিন্দে বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী, ধর্ষণকারীদের যাবজ্জীবনকারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এর চেয়েও কঠোর শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) বিষয়েবিস্তারিত আলোচনা করতে হবে।
নিউজরুম