কৃষি ডেস্ক(২4 ডিসেম্বর): ‘পৌষমাসত কিসের হরতাল, জারত মানুষএমনি ঘর থাকি বেরবার পায় না। কায় ওমার হরতালত থাকপে। সকাল থাকি ছাওয়াগুলোআগুন পোবার নাকছে। তাও জার যায় না। ছাওয়াগুলো বাঁচে না, তারা যদি হরতালডাকপার পায় তার আগত মানুষক একান করি কম্বল দ্যাখ-তো। তখন অ্যালা দ্যাখিমকায় ভাল, শ্যাকের বেটি নাকি জিয়ার বৌ‘ –কথাগুলো বললেন, উপজেলার বিদ্যানন্দইউনিয়নের চতুরা গ্রামের অশময়ী (৭০)। গত ১ সপ্তাহ ধরে তীব্র শৈত্য প্রবাহেরকারনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢিলেঢালা ভাবেহরতাল পালিত হয়েছে। অন্যদিকে, টানা শৈত্য প্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়েপড়েছে। শীতের তীব্রতায় শিশু ও বৃদ্ধ সহ সব বয়সের মানুষ দারুণ কষ্টে পড়েছে।পাশাপাশি নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষগুলো চরম দূর্ভোগে পড়েছে। গত ১সপ্তাহথেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সূর্য্যরে আলো সঠিকভাবে দেখা যায়নি। শীতেরতীব্রতা এত বেশী যে ঘর থেকে মানুষের বের হওয়া দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। স্কুলও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ঘন কুয়াশার কারণে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না।উপজেলা তিস্তা চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, খড়কুটো জড়ো করে আগুন লাগিয়ে দিয়েঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পেতে সুকময়ী(৬৫) সহ তার নাতি-নাতিনী আগুন পোহাচ্ছে।তিনি বলেন, পৌষমাস না পরতেই এবার এমন ঠান্ডা নামছে, ছাওয়া বুড়া সবাই থরথরকরে কাঁপছে বাহে।
চাকির পশার ইউনিয়নের চিন্তাময়ী (৮৮) বলেন, জারতছাওয়াগুলা মোর মরি গ্যালো। সারাদিন ওল্যাক ক্যাথার তলত ধরি আছং। চাকিরপশার ইউনিয়ন ও বিদ্যানন্দ এলাকা গিয়ে দেখা যায়, মহেন্দ্র নাথ(৭৫) ওনুরমোহাম্মদ (৩৫) তার গরুর গায়ে চটের বস্তা দিচ্ছে। তাদের কাছে জানতে চাইলেতারা জানান, মানুষের মতো এদেরও ঠান্ডা ধরছে। এদের গায়ের লোমগুলো শিউরেউঠেছে। এজন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন কৃষকের বীজতলায় ঘনকুয়াশার কারনে বোরোচারা গুলো কোল্ড ইনজুরিতে সাদা হয়ে গেছে। উপজেলাপ্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ছানাউল্লা জানান, এ উপজেলায় সরকারীভাবে৪‘শ পিচ কম্বল এসেছে। সেখান থেকে ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ৪০পিচকরে কম্বল বিতরন করেছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুনুর মোঃআক্তারুজ্জামান তার গাড়ীতে শীতার্ত মানুষের কম্বল বহন করে নিজহস্তে বিতরনকরছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই ছিন্নমূল মানুষরা একটুকরো গরমকাপড়ের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। অপরদিকে কাপড়ের দোকান গুলোতেবেড়েছে শীতার্ত মানুষের সমাগম। সাধারন ক্রেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গরম কাপড়কিনতে। এরই সুবাধে শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীরাও শীতের পোশাক নির্ধারিত দামের চেয়েঅনেক বেশী দামে বিক্রি করছে ক্রেতাদের কাছে।
শৈত্য প্রবাহের কারণেশিশু-বৃদ্ধ সহ সব বয়সের মানুষ ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীত জনিতডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি সহ অসুখ-বিসুখ ভুগছেআবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা। তবে তা এখনো ভয়াবহ আকার ধারন করেনি। হিমশীতল বাতাসেরকারনে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে কেউ বের হতে চায় না। গরিব-দুঃখী মানুষ কাজে যেতেপারছে না। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশী অসুবিধায় পড়েছে নিু আয়ের মানুষ। ঠান্ডায়মানুষ পশু সবাই জড়োসড়ো। হাড় কাঁপানো শীতে একটু উষ্ণতা পেতে মানুষ যেমনমরিয়া হয়ে উঠে তেমনি গবাদী পশু থেকে শুরু করে কুকুর-বিড়াল গুলো খুজছেউষ্ণতা। তাই গবাদী পশুর গায়ে উঠেছে চটের বস্তা। এছাড়া ঘন কুয়াশায় বোরাবীজতলা ও আলু কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আলু, সরিষার সহ শীতকালীনশাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগজানিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে�ক্্রটিতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েগত এক সপ্তাহে শতাধিক শিশু ও বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে।
নিউজরুম