ঢাকা (২৪ ডিসেম্বর):– দিল্লিতে চলন্ত বাসে তরুণী গণধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় ভারতজুড়ে চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যেন থামতেই চাচ্ছে না। সার্বজনীন গণবিক্ষোভ ঠেকাতে সর্বশেষ রোববার রাজধানী নয়াদিল্লিতে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
পুলিশ এরইমধ্যে ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ৬ ধর্ষকের সবাইকে গ্রেফতার কারে আদালতে সোপর্দ করেছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ধর্ষণপীড়িত দিল্লির এই গণধর্ষণের ঘটনাটি জনগণ প্রচলিত বিচারের ধারায় সমাধানের আশায় ছেড়ে দিতে চাইছে না। বিভিন্ন মহল থেকে ধর্ষকদের কঠিনতম বা চরম শাস্তির প্রস্তাব উঠছে। অনেকেই বলছেন, ভারতজুড়ে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা বছরকে বছর যেভাবে বেড়েই চলেছে তাতে মৃত্যুদণ্ডই হতে পারে এর একমাত্র সমাধান। তবে অন্যরা প্রস্তাব করছেন ধর্ষকদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর চেয়ে চরম গ্লানি আর অসম্মানজনক শাস্তির আইন করা হোক। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে আছে, সশ্রম কারাদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষকদের জনসমক্ষে উলঙ্গ প্যারেড করানো, কেউ বলছেন তাদেরকে আমৃত্যু কারাবাসের দণ্ড দেওয়া হোক, কেউ বলছেন তাদেরকে ইসলামি কায়দায় কোমড় পর্যন্ত মাটিতে গেঁথে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হোক। তবে এর সঙ্গে আরও চরম যে শাস্তির কথা বেশ জোরেশোরে উত্থাপিত হচ্ছে, তা হলো ধর্ষকদের প্রধান শাস্তি হওয়া উচিৎ— নপুংসক করে দেওয়া। এ নিয়ে প্রথম দিকে কেউ কেউ অস্বস্তি প্রকাশ করলেও ক্রমশ এই দাবি জোরদার হচ্ছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এবং ইউরোপের ব্রিটেন, জার্মানি এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইলে এ ধরনের দণ্ডের উদাহরণ রয়েছে।
এদিকে, দিল্লির ভয়াবহ গ্যাংরেপের ঘটনার সূত্রে এ ধরনের শাস্তি দাবির বেশ আগে দিল্লিরই এক এডিশনাল সেশন জজও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে একই শাস্তির প্রস্তাব করেছিলেন বলে জানা গেছে।
হিন্দি অনলাইন পত্রিকা নবভারত জানায়, নাবালিকা সৎ কন্যাকে ধর্ষণকারী এক ব্যক্তির বিচারের রায় ঘোষণাকালে ২০১১ সালের এপ্রিলে এডিশনাল সেশন জজ কামিনী লাউ বলেছিলেন, “আইনের ধারায় আমার হাত বন্ধ। আইন মোতাবেক এই অপরাধীকে আমি জরিমানাসহ যাবজ্জীবন দিতে পারি।”
রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিচারক তার মন্তব্যে বলেন, “কিন্তু বাস্তবে আমার মনে হয় এটা এমন এক অপরাধ যার মোকাবেলায় পৃথক তরিকা অনুসরণ করা উচিৎ। ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের মামলায় সাজা হিসেবে নপুংসক (খোজা) করে দেওয়ার বিধান চালু করা এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়টির ওপর আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।”
ধর্ষণ মামলায় বিকল্প সাজার এ প্রস্তাব বিবেচনার জন্য বিচারক কামিনী ভারতের আইন মন্ত্রণালয় ও ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেনেও পাঠিয়েছিলেন।
বিচারক কামিনী এ প্রসঙ্গে আরও বলেছিলেন, “এটা এমন একটা সময় যখন আমাদেরকে উন্নত কয়েকটি দেশের মত লিঙ্গ কর্তন বা ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে নপুংসক করে দেওয়ার আইন চালুর বিষয়ে ভাবতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি এবং ইসরায়েলে ধর্ষণের একাধিক মামলায় এ ধরনের রায় দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এ রায় কার্যকরা করা হয় ঔষধ প্রয়োগে, অন্যত্র অস্ত্রোপচারের প্রয়োগ করা হয়।
তবে এ ক্ষেত্রে দণ্ডিতের স্বেচ্ছানুমতির প্রয়োজন হয় এবং এই অঙ্গহানিতে দণ্ডিতরা রাজি হয়ে থাকেন এ স্বার্থে যে এর ফলে তাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ হ্রাস করা হয়ে থাকে।
এদিকে, সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ভারত সরকার ব্যাপক গণদাবির মুখে ধর্ষণের দণ্ড সংক্রান্ত প্রচলিত আইন সংশোধনে সম্মত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে ফাঁসি-দণ্ডের সরাসরি প্রতিশ্রুতি না দিলেও সাজা বাড়াতে আইন সংশোধনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে শাসক মহল।
রাজধানী দিল্লিতে চলন্ত বাসে ডেন্টাল কলেজের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় চলমান তীব্র আন্দোলনের সূত্রে গত শনিবার গভীর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার ধর্ষণের শাস্তি বাড়াতে প্রচলিত আইনে সংশোধন আনবে। তবে তা হবে ধর্ষণের বিরলতম (ভয়াবহতম) মামলার ক্ষেত্রে।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সুষমা স্বরাজ সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার যে দাবি করেছেন তা অবশ্য খারিজ করে দেন সিন্ধে।
নিউজ রুম