কক্সবাজার (২৪ ডিসেমব্র) গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা ছয়েক আগেই মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে শাহপরীর দ্বীপ ছেড়েছে এজাহার মাঝির বোট।
রোববার সন্ধ্যায় বোটটি বঙ্গোপসাগরে ভাসে। নুর মোহাম্মদের আর একটি বোট শাহ পরীর দ্বীপ ছাড়ে রাতের চতুর্থ প্রহরের শেষে।
এ দুই বোটে ১২০ জন করে মোট ২৪০ জন ভাগ্যান্বেষী কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়েন।
এর আগে “রোববার রাতে ১২০ যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়া যাবে এজাহার মাঝির বোট” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। রাত ১২টার পর বোটটির শাহপরীর দ্বীপ ছাড়ার কথা থাকলেও রোববার সন্ধ্যার পর পরই তড়িঘড়ি বোটটি সাগরে ভাসানো হয়।
অপর বোটটি ছেড়ে যায় রাত সাড়ে তিনটায়। ওই বোটের নাম ‘আফসার’। এ বোটের মাঝি ইলিয়াস। বোটের মালিক সাবরাং ইউনিয়নের চানতলী পাড়ার অলি আহমেদের ছেলে নুর মোহাম্মদ। তার মাধ্যমেই ১২০ যাত্রী মালয়েশিয়ার পথে রওয়ানা হন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ণিমাকে সামনে রেখে মানবপাচারীরা টেকনাফের শাহ্পরীর দ্বীপ, খুড়ের মুখ ঘাট, মুন্ডারডিল , জয়নালের ঘাট, সেন্টমার্টিনস, সাবরাং, বদর মোকাম, বাহারছড়া, ডেল পাড়া, নোয়াপাড়া, জালিয়াপাড়া, মুন্ডাডিল, খুড়েরমুখ, জমাদারের কাঠি, মুশকিলের পাড়া ঘাট ও উখিয়ার কুতুবপালং, কক্সবাজারের হিমছড়ি, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, চট্টগ্রামের মিরসরাই, শিকলবাহাসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে কমপক্ষে এক ডজন ইঞ্জিন নৌকা মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এমনই এক নৌকার মাঝি বর্মাইয়া রশিদ জানান, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় সাগর জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে। বুক ভরা পানি থাকায় দরিয়া থাকে শান্ত ও ঢেউহীন। এ অবস্থায় ছোট নৌকা নিয়ে দূর সাগর পাড়ি দেওয়া সহজ হয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপের কোনার পাড়া গ্রামের সৈয়দ করিম চৌকিদারের ছেলে ইয়াহিয়া, মাঝের পাড়া গ্রামের সুলতান আহমেদের ছেলে হাফেজ আব্দুল্লাহ, কলারডাপা গ্রামের নজির চোরা, দক্ষিণপাড়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহিদ মাঝি, ডেইল পাড়ার নুরু বিবি ও তার ভাগিনা ইলিয়াস, মুন্ডারডিলের আক্তার ফারুখ মার্ডারার আব্দুর রহমান, তার পিতা হাজী আবুল কাসেম, স্থানীয় সংসদ সদস্য বদির খালাতো ভাই ও সাবেক ইউপি মেম্বার ইউনুস, এমপির ভাগিনা ও সাবরাংয়ের আব্দুর রহমান দারোগার ছেলে নিপু, মুন্ডারলিরের আইয়ুব খান ও জাহাজের তেল বিক্রেতা জয়নালসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাসহ এই বিপুল সংখ্যক লোক জোগাড় করে।
তবে আইয়ুব শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় সিন্ডিকেটটি একটু বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছে। তারা একই সঙ্গে লোক ওঠানোর স্পট পরিবর্তনের চিন্তা করছে।
জোগাড় করা লোক প্রতি তিনশ’ টাকা নেন সংশ্লিষ্ট ঘাটের ইউপি মেম্বার ও পাঁচশ টাকা ইউপি চেয়ারম্যান এবং টেকনাফ থানা পুলিশ নেয় পাঁচশ’ টাকা। এছাড়াও একটি অংশ এমপি বদি ও তার ভাইদের সিন্ডিকেটে জমা হওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যোগাড় হওয়া মানুষ আশ্রয় নিয়ে থাকে টেকনাফের এমপি সাহেবের আত্মীয় ও তার ভাগিনা নিপুর চাচাতো ভাই আকতার কামাল ও শাহেদ কামালের (পিতা- নাজির আহমেদ) বাড়িতে।
আট দিনে থাইল্যান্ড পর্যন্ত পৌছে দিতে দালালরা আদায় করছে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেখানে অপেক্ষারত থাই দালাল নেবে আরো এক লাখ ১৫ হাজার থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
নিউজরুম