ঢাকা (২৩ ডিসেম্বর) : চলন্ত বাসে মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল নয়াদিল্লিতে প্রতিবাদকারীদের দমাতে রোববার ভোর থেকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে সরকার।
বিক্ষোভকারীদের শুধু রামলীলা ময়দান ও যন্তর মন্তরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে জলকামান নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে ইন্ডিয়া গেটে সমবেত প্রতিবাদকারীদের পিছু হটিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের হাতে অবরুদ্ধ দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের সব প্রবেশ পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে রোববার সকালে গিয়ে সাক্ষাৎ করে এসেছেন বলে জানা গেছে।
ধর্ষণকাণ্ডে ক্ষুদ্ধ দিল্লির নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্ম “আমরা বিচার চাই” (উই ওয়ান্ট জাস্টিস) এই স্লোগান নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই নয়াদিল্লির রাইসিনা হিলের ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
ইন্ডিয়া গেটের বিক্ষোভের এই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতেই। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। তরুণ প্রজন্ম ছাড়াও এতে অংশ নেয় ভারতের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষেরা।
রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রতিবাদকারীদের এ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ বিস্মিত করেছে ভারতের বর্তমান রাজনীতির কারবারীদেরও।
শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনের পাশাপাশি সফদারজাং হাসপাতালের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে প্রতিবাদকারীরা। পুলিশ এ সময় গরম পানি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়।
এদিকে শনিবার মধ্যরাতে একদল বিক্ষোভকারী সোনিয়া গান্ধীর সরকারি বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করলে সোনিয়া গান্ধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এ ঘটনায় ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে নয়াদিল্লির মুনিরকা থেকে দ্বারকা যাওয়ার জন্য একটি এসি বাসে ওঠেন ধর্ষণের শিকার ওই মেডিকেলের ছাত্রী ও তার বন্ধু। বাসে ওঠার ১০ মিনিটের মাথায় পাঁচ যুবক ওই তরুণীকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে। পুরুষ বন্ধুটি বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। এরপর তারা ওই তরুণীকে জোর করে বাসের কেবিনে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য দু’জনের শরীর থেকে বেশির ভাগ জামাকাপড় খুলে নিয়ে স্থানীয় মহিপালপুর ওভারব্রিজের ওপর তাদের ছুড়ে ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতের পার্লামেন্টের দুই কক্ষই। বিরোধীদের প্রতিবাদে রাজ্যসভায় পরপর দুই দফায় অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন সভাপতি হামিদ আনসারি। লোকসভাতেও বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত অলোচনা হয়। বিষয়টি উত্থাপন করেন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। ধর্ষণকারীর প্রাণদণ্ড দাবি করে বিরোধী এ নেত্রী বলেন, ধর্ষিতার শারীরিক দাগ মিলিয়ে গেলেও মানসিক আঘাত থেকে যাবে সারাজীবন। পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দেন স্পিকার মীরা কুমার। এ দিকে এই ঘটনায় পুলিশ জড়িত বাসচালকসহ পাঁচ ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে।
নিউজরুম