কক্সবাজার (২৩ ডিসেম্বর): এবার সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় আছে ১২০ জন বাংলাদেশী যুবক। তবে বার্মিজ কাঠের বড় জাহাজে করে নয়। দেশের নানা স্থান থেকে জড়ো হওয়া এই যুবকেরা রোববার গভীর রাতে যাচ্ছেন দেশে তৈরি মাছ ধরার কাঠের জাহাজে করেই।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কোয়াংছড়ি পাড়ার এজাহার মাঝির এ বোট রওনা হবে রোববার রাত ১২টার পর।
সামনের পূর্ণিমাকে সামনে রেখে মানবপাচার কারীরা টেকনাফের শাহ্পরীর দ্বীপ, খুড়ের মুখ ঘাট, মুন্ডারডিল, জয়নালের ঘাট, সেন্টমার্টিন, সাবরাং, বদর মোকাম, বাহারছড়া, ডেল পাড়া, নোয়াপাড়া, জালিয়াপাড়া, মুন্ডাডিল, খুড়েরমুখ, জমাদারের কাঠি, মুশকিলের পাড়া ঘাট ও উখিয়ার কুতুবপালং, কক্সবাজারের হিমছড়ি, মহেশখালি, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, চট্টগ্রামের মিরসরাই, শিকলবাহাসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে কমপক্ষে এক ডজন ইঞ্জিন নৌকা মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এরই এক নৌকার মাঝি বর্মাইয়া রশিদ বাংলানিউজকে জানান, অমাবশ্যা ও পূর্ণিমায় সাগর জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে। বুক ভরা পানি থাকায় দরিয়া থাকে শান্ত ও ঢেউহীন। এ অবস্থায় ছোট নৌকা নিয়ে দুর সাগর পাড়ি দেওয়া সহজ হয়।
রোববার রাতে ছেড়ে যাওয়া কোয়াংছড়ি পাড়ার এজাহারের নৌকায় এরই মধ্যে এক’শ ২০ যাত্রীর জন্য তোলা হয়েছে ১০ বস্তা চাল, ৫ কেজি পেঁয়াজ ও কিছু তরিতরকারী। দালালের আশ্রয়ে অবস্থান করছে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীরাও।
তবে, কক্সবাজারের মানবপাচারকারী দালালচক্র বা সিন্ডিকেট একই। এই চক্রের বাইরে কেউই এ কাজে বাধা দিতে পারে না। এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, তার ভাই- ভাগিনা থেকে শুরু করে তার আত্মীয়-স্বজন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাতেও রয়েছেন এরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুন্ডারডিলের আক্তার ফারুখ মার্ডারার আব্দুর রহমান, পিতা হাজী আবুল কাসেম, সংসদ সদস্য বদির বেয়াই (তালতো ভাই) এবং সাবেক ইউপি মেম্বার ইউনুস, এমপির ভাগিনা ও সাবরাংয়ের আব্দুর রহমান দারোগার ছেলে নিপু, মুন্ডারলিরের আইয়ুব খান ও জাহাজের তেল বিক্রেতা জয়নালসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাসহ এই বিপুল পরিমান লোক জোগাড় করে। তবে আইয়ুব শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় সিন্ডিকেটটি একটু বেশি সতর্ক হয়ে পড়েছে। তারা একই সঙ্গে লোক ওঠানোর স্পট পরিবর্তনের চিন্তা করছে।
জোগাড় করা লোক প্রতি তিন’শ টাকা নেন সংশ্লিষ্ট ঘাটের ইউপি মেম্বার, পাঁচশ টাকা নেন ইউপি চেয়ারম্যান এবং টেকনাফ থানা পুলিশ নেয় পাঁচ’শ টাকা। এছাড়াও একটি অংশ এমপি বদি ও তার ভাইদের সিন্ডিকেটে জমা হওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দালাল আব্দুর রহমান জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করেই লোক পাঠানো হয়। এ কাজে বরাবর সহায়তা করেন জাহিদ নামের টেকনাফের এক স্থানীয় সংবাদকর্মী।
অন্য এক দালাল জানান, যোগাড় হওয়া মানুষদের আশ্রয় নিয়ে থাকে টেকনাফের এমপি সাহেবের আত্মীয় ও তার ভাগিনা নিপুর চাচাতো ভাই আকতার কামাল ও শাহেদ কামালের (পিতা- নাজির আহমেদ) বাড়িতে।
আট দিনে থাইল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিতে দালালরা আদায় করেছে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেখানে অপেক্ষারত থাই দালাল নেবে আরো এক লাখ ১৫ হাজার থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
নিউজরুম