ঢাকা (২২ ডিসেম্বর) : ফের চাঙ্গা হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীর। শীর্ষ নেতারা কারাবন্দি থাকলেও র্যাব-পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে সংগঠনটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নতুন কর্মী সংগ্রহ করছেন। প্রকাশ্যে বিতরণ করছেন লিফলেট।
বিশেষত প্রতি শুক্রবার জুমা’র নামাজের পর রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে লিফলেট বিতরণ করছে তারা। তাদের লিফলেটে এসেছে বাংলানিউজের সংগ্রহেও।
এ প্রসঙ্গে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের বক্তব্য, হিজবুত তাহরীর সব সময়ই তাদের নজরদারির মধ্যে থাকে। তবে এর মধ্যেও গোপনে তাদের কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে খবর রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা, আজমপুর, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট এলাকায় বর্তমানে হিজবুত তাহরীরের বেশি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এসব এলাকা থেকেই পুরো রাজধানীতে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্রবার জুমা’র নামাজের পর হিজবুত তাহরীর কর্মীরা এবস এলাকার বিভিন্ন মসজিদে লিফলেট বিতরণ করছে। কখনো তারা নিজেরা, আবার কখনো ভাড়া করা লোক দিয়ে এসব লিফলেট বিতরণ করছে।
গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার আজমপুর জামে মসজিদের সামনে থেকে লিফলেট বিতরণ করার সময় ২ জনকে আটক করা হয়। এরা হলেন- আবু জাফর ও রবিউল ইসলাম।
এদের গ্রেফতারের পরের সপ্তাহে আবারো লিফলেট বিতরণ করে নিষিদ্ধ এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া গত ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় তারা পোস্টার সাঁটায়।
বর্তমানে যেসব এলাকায় হিজবুত তাহরীরের কর্শকাণ্ড বেশি পরিচালিত হচ্ছে তার মধ্যে উত্তরা, আজমপুর, খিলক্ষেত, বনানী, গুলশান-১, গুলশান-২, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তুরাগ, উত্তরখান, শ্যামপুর, মিরপুর, খিলক্ষেত, দক্ষিণখান, আশুলিয়া, আবদুল্লাহপুর, নামাপাড়া, নিকুঞ্জ, মোল্লারটেক, কামারপাড়া অন্যতম।
গত শুক্রবারের লিফলেটে হিজবুত তাহরীর যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তার মধ্যে রয়েছে, “গত ৪ বছর হাসিনা সরকার, তার বিভিন্ন বিশ্বাসঘাতক ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে, এই নীল নকশা বাস্তবায়নে মার্কিনী ও ভারতীয়দের পূর্ণ সহযোগিতা করে এসেছে। এই একই সেবা প্রদানে বিরোধী দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়াও মরিয়া হয়ে আছে, কারণ, সাম্রাজ্যবাদীদের সেবায় হাসিনার সঙ্গে তার কোন পার্থক্য নেই। যদি তার দল ও জোট সরকার গঠন করে, তবে সেও একই বিশ্বাসঘাতক নীতি চলমান রাখবে।”
ডিএমপির মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “নিষিদ্ধ সব সংগঠনই গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারিতে থাকে। সেক্ষেত্রে হিযবুত তাহরীর ও জেএমবিও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সংগঠন দু’টির কার্যক্রম অমাদের নজরদারির মধ্যে থাকে। যখনই এরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখনই গ্রেফতার হয়।”
এই মূহুর্তে তাদের সাংগঠনিক অবস্থা কি এমন প্রশ্নে তিনি দাবি করে বলেন, “ যেহেতু তারা নজরদারির মধ্যে রয়েছে সেহেতু নাশকতা বা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি সৃষ্টির মতো শক্তি তাদের নেই। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখছি।”
র্যাবের গোয়েন্দা সেল জানায়, হিজবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড তারা নজরদারির মধ্যে রেখেছেন। বর্তমান সময়ে লিফলেট, পোস্টার সাঁটানোর খবর তারা পেয়েছেন।
সেল থেকে আরো জানানো হয়, এখন যারা হিজবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তাদের গ্রেফতারে র্যাবের বিশেষ টিমও কাজ করছে।
সূত্রমতে, ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথা চাড়া দেয় হিযবুত তাহরীর। পরবর্তীতে সরকার বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। গ্রেফতার করে হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দীন ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজনকে। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি এদের কার্যক্রম। রাজধানী ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লিফলেট ছড়ানো থেকে শুরু করে প্রকাশ্যেই মিছিল পর্যন্ত এরা করে থাকে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাদের নানা পরিকল্পনা এদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে।
নিউজরুম