মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি: দূরত্ব বাড়ছে বায়রা ও সরকারের মধ্যে

0
732
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা (২১ ডিসেম্বর) : মালয়েশিয়ায় সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রপ্তানিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সঙ্গে সরকারের দূরত্ব ক্রমাগত বাড়ছে।

বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া বা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে বায়রার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই সরকার সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে এককভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এরই মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি উদ্যোগের বিরোধিতা করায় বায়রাকে সাংগঠনিকভাবে বর্জন করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

একারণেই সরকারের সঙ্গে বায়রার দূরত্ব বাড়ছে বলে উল্লেখ করেছেন বায়রা সভাপতি শাহজালাল মজুমদার।

তিনি অভিযোগ করে জানান, সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগের বিরোধিতা করায় বায়রাকে এরই মধ্যে সাংগঠনিকভাবে বর্জন করতে শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

তবে সরকারের সঙ্গে বায়রার দূরত্ব অস্বীকার করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, “তারা সরকারের এজেন্ট হিসেবে যথাযথ আচরণ করছে না। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং অনেক ক্ষেত্রে সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করছে বায়রা। অথচ লাইসেন্স নেওয়ার সময় তারা সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

সচিব জানান, মালয়েশিয়ায় সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বায়রার আচরণ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বায়রার আচরণ পরিবর্তন হলে সরকারের অবস্থানও পরিবর্তন হতে পারে। সরকারকে কাজ করার ক্ষেত্রে যদি বায়রা সহযোগিতা না করে, সে ক্ষেত্রে সরকারও তাদের সহযোগিতা করবে না।

বায়রা সভাপতি শাহজালাল মজুমদার বলেন, “বায়রাকে সহযোগিতা না করায় এ নিয়ে বায়রা নেতা ও সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভের। তবে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বায়রাকে আশ্বাস দিয়েছেন।”

চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাস মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন না করলে আগামী জানুয়ারিতেই বায়রার সদস্যরা আন্দোলনে যাবে।”

তিনি জানান, জনশক্তি খাতের বিভিন্ন সভা এবং অনুষ্ঠানে এতোদিন ধরে মন্ত্রণালয় বা সরকারের পক্ষ থেকে বায়রার সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। কিন্তু এখন তা বন্ধ করে এজেন্সিগুলোর সঙ্গে এককভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে সরকারের অনুষ্ঠান ও দিবসকে কেন্দ্র করে মেলা আয়োজনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বায়রার কোনো নেতাকেই সাংগঠনিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সংগঠনের নেতাসহ সকল সদস্য এজেন্সি আলাদাভাবে আমন্ত্রণ পেয়েছে। এতে সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

বায়রার সদস্যরা জানান, সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারণে সংগঠনের নেতারা অভিবাসী মেলাসহ এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। সে কারণে এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে সদস্যদের উপস্থিতিও তেমন ছিলনা।

তবে আমন্ত্রণ না জানানো হলেও বায়রার নির্বাহী কমিটির সদস্য শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কিছু সাধারণ সদস্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মেলায় যোগ দেন। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এসব কর্মসূচিতে তারা অংশ নিয়েছেন বলে জানান বায়রার নেতারা।

এ ব্যাপারে বায়রা সভাপতি বলেন, “কিছু নেতা ও সদস্য সংগঠনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দু’একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এসব নেতা ও সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাধারণ সদস্যরা এতে যোগ দিলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তা করতে পারেন না। এসব নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

বায়রা সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে বায়রা বলিষ্ঠ সাংগঠনিক ভূমিকা রাখলেও সরকারি পর্যায়ে লোক পাঠাতে চুক্তি করেছে সরকার। দেশে প্রায় এক হাজার ২০০ সরকার নিবন্ধিত ও লাইসেন্স পাওয়া রিক্রুটিং এজেন্সি থাকার পরও সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সরকারের এ সিদ্ধান্তে সংগঠনের সদস্যরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এজেন্সি প্রতি ৩০ লাখ টাকা করে সরকারি তহবিলে জমা দিয়েই লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে।”

বায়রা এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সরকার বায়রার সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

এসময় মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের একক ইচ্ছার কারণে মন্ত্রণালয় বায়রাকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে বলেও উল্লেখ করেন বায়রা সভাপতি।

নিউজরুম

শেয়ার করুন