টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের মধ্যে অন্য দু’টি অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ভারত। বার্তা সংস্থার এক খবর অনুসারে বাংলাদেশের উজানে মেঘালয়ে রাজ্য সরকার উমিয়ো ও মাইনথ্রু নামে দুই নদীতে বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। মাইনথ্রু সারি নদী নাম নিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা দিয়ে এবং উমিয়ো উমিয়ম নদী নামে সুনামগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। গ্রেটার শিলং ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের আওতায় উমিয়ো নদীতে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে মেঘালয়। বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, ভাটির দেশের সাথে আলোচনা ছাড়া অভিন্ন এই দুই নদীর ওপর কিছুতেই তারা বাঁধ দিতে পারে না, উমিয়ো ও মাইনথ্রু নদী ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। তাই যথাযথ সমীা ছাড়া এই দুই নদীর ওপর কোনো ধরনের অবকাঠামো বাংলাদেশ মেনে নেবে না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তবে নতুন দুই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেয়নি ভারত। কবে নাগাদ তাদের বক্তব্য পাওয়া যাবে সে বিষয়েও কিছু জানায়নি তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের বিদেশ দফতরে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হতে পারে। আবার দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বা জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন (জেসিসি) বৈঠকেও এটা তোলা হতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ে জেসিসি বৈঠক ঢাকায় হওয়ার কথা রয়েছে। আবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদেরও বাংলাদেশ সফরে এসে দ্বিপীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের ৫৭টি অভিন্ন নদীর ৫৪টিই এসেছে ভারতের ওপর দিয়ে। এগুলোর মধ্যে ভারতের সাথে শুধু গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি হয়েছে। গত বছর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। অন্য অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার তাগিদ বারবার দেয়া হলেও এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
উমিয়ো ও মাইনথ্রু নদীর ওপর ভারতের বাঁধ দেয়ার খবরটি এমন এক সময় এলো, যখন বাংলাদেশের মানুষ ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ এবং আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের পানি গঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে বাংলাদেশ বারবার তাগিদ দিয়ে এলেও এখনো এ ব্যাপারে ভারতের কোনো কার্যকর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই নতুন দুই নদীর বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগকে কোনোভাবেই একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে নয়া দিল্লির সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ হতে পারে না। পানি নিয়ে সঙ্কট এশিয়ার সব দেশেই প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় পানিসম্পদ নিয়ে যেকোনো উদ্যোগ অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই হওয়া উচিত। ভাটির দেশের আইনসঙ্গত অধিকার মেনে না নিলে তা ভারতের জন্যও সুখকর কিছু হবে না। কারণ ভারতের অনেক বড় নদী প্রতিবেশী চীন থেকে সে দেশে এসেছে। ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন পৃথিবীর বৃহত্তম পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ জন্য যদি চীন ড্যাম ও ব্যারাজ দুটিই করে তাহলে ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশ উভয়কেই ভুগতে হবে। তাই আমরা আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুসরণ করে ভারত অভিন্ন নদীতে বাঁধ দেবে বলে আশা করতে চাই। এ ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো ফল না হলে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করার ব্যাপারে সরকারের ভাবা উচিত বলে আমরা মনে করি।