ঢাকা (২১ ডিসেম্বর) : আবারও গোপন নথি ফাঁসের হুমকি দিলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। লন্ডনস্থ ইকুয়েডরের দূতাবাসে কার্যত গৃহবন্দী অ্যাসাঞ্জ তার দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়ার ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে জনসম্মুখে আসেন বৃহস্পতিবার। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকির মুখে ইকুয়েডরের দূতাবাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন তিনি।
অ্যাসাঞ্জের বক্তব্য শুনতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই লন্ডনের নাইটব্রিজ এলাকায় অবস্থিত দূতাবাস ভবনটির সামনে জড়ো হতে থাকেন তার ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীরা। সন্ধ্যায় তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে মোমবাতিও প্রজ্বলন করেন তারা।
দূতাবাস ভবনের বারান্দা থেকে উপস্থিত ভক্ত সমর্থক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন ৪১ বছর বয়সী এই হ্যাকার । এ সময় দেওয়া ভাষণে তিনি আরও ১০ লক্ষাধিক গোপন নথি প্রকাশের ঘোষণা দেন।
ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘উইকিলিকস কখনও সত্য প্রকাশে পিছপা হবে না’।
সম্প্রতি উইকিলিকসের কার্যক্রমকে চলমান অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “কূটনৈতিক তত্পরতার বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউই মুক্ত সংবাদ প্রকাশে বাধা হতে পারবে না।
তবে আলোচনার দ্বার এখনও খোলা আছে উল্লেখ করে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “আমি সব সময় প্রস্তুত কথা বলতে, আমার দ্বার উন্মুক্তই আছে। তবে এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।”
তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইকুয়েডরের সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “ইকুয়েডর সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে।”
উইকিলিকসের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা উল্লেখ করে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “নতুন বছরে আরও ১০ লাখের বেশি গোপন নথি প্রকাশ করবে উইকিলিকস।”
অ্যাসাঞ্জ ২০১২কে উইকিলিকসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া দায়িত্বপালন করতে গিয়ে সরকারি রোষের শিকার হয়ে কারাভোগরত সাংবাদিকদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে পৃথিবীব্যাপী কারাভোগরত সংবাদকর্মীদের প্রতি আমি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।”
গত বছর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগে সুইডেন অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করে। সুইডেনের অনুরোধে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত অ্যাসাঞ্জকে গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ। পরে শর্তসাপেক্ষে জামিন মুক্তি পেয়েই গত ১৯ জুন লন্ডনস্থ ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। ১৬ আগস্ট তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেয় ইকুয়েডর।
গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সেই থেকে দূতাবাসের অভ্যন্তরেই বসবাস করছেন অ্যাসাঞ্জ। কারণ দূতাবাস ভবন লন্ডনে অবস্থিত হলেও কোনো দূতাবাসের ভেতরে প্রবেশের অধিকার নেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে সুইডেন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যাসাঞ্জ।
ধারণা করা হচ্ছে কূটনীতিকদের গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে তাঁর ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করতে পারে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
নিউজরুম