মফস্বল সাংবাদিকরাও ওয়েজ বোর্ড পাবেন : শাবান মাহমুদ

0
509
Print Friendly, PDF & Email
ঢাকা (১৩ ডিসেম্বর) :ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মফস্বল সাংবাদিকদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য সচিবও এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে মফস্বল সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের আওতায় এনে সকল সুবিধা প্রদানের প্রক্রিয়াগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে। এক আলাপচারিতায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ এসব কথা জানান।
তিনি ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করে আরো বলেন, সাংবাদিক সমাজের দীর্ঘদিনের ভিত্তি ভেঙ্গে ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আপ্রাণ চেষ্টা করব।  ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, সাংবাদিকদের পেশাগত মনোন্নয়ন, প্রশিক্ষন, ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বন্ধসহ বিভিন্ন দাবীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সকল অন্যান্য সদস্য এবং প্রবীন সাংবাদিকদের মতামত নিয়ে কাজ করব।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে শাবান মাহমুদের সাথে আলাপচারিতার চুম্বক অংশটুকু এফএনএস�র অনলাইন পাঠক এবং সেবা-গ্রহিতাদের তুলে ধরা হলো : সাংবাদিকতা পেশায় আগমন প্রসঙ্গে শাবান মাহমুদ বলেন, ১৯৮৮ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তখন লক্ষ্য করলাম বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাত মারামারি। ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুর ভিত্তিক হয়ে তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অশান্ত করতঃ। এগুলো আমাকে খুব পীড়া দিত। ঐসব রাজনৈতিক দলের লেজুর ভিত্তিক সংগঠনগুলোর কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ ছাত্র সমাজকেও হামলার শিকার হতে হত। এ বিষয় গুলো আমাকে খুব পীড়া দিত। ভাবতাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির বিষয় সরকাকে জানানো  উচিত। এ কারনেই একটি নৈতিক দায়িত্ব হিসাবেই আমি দৈনিক বাংলার বানী পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় সংবাদ দাতা হিসাবে সাংবাদিকতা শুরু করি।

সাংবাদিকতায় কর্মজীবন শুরু প্রসঙ্গে শাবান মাহমুদ জানান, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে দৈনিক লাল সবুজ পত্রিকা নামে একটি পত্রিকা সংযুক্ত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন। শেখ নজরুল ইসলাম এবং নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন পিযুষ বন্দোপাধ্যায় ঐ সময় আমি মাত্র ১২০০টাকা বেতনে স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করি। পরবর্তী সময়ে দৈনিক রূপালী-বাংলাবাজার পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। নিঃস্বার্থভাবে আপোষহীন প্রচেষ্টায় পেশার স্বার্থে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম ও কর্মসূচী সফল করতে নিজ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করছি।

সাংবাদিক সমাজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নিজেকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আন্দোলনের সাথে আরও দায়িত্বশীল করার মানসে ২০০৬ সালে সদস্যদের সরাসরি ভোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে করে জয়লাভ করি। এ সময় সাংবাদিক সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করি। ২০০৮ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাচনে পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ১ম বারের চেয়ে আরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই। ২০১০ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাচনে ওমর ফারুক-শাবান মাহমুদ পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে পরাজিত হই। এ পরাজয়ের বেদনা আমাকে ভারাক্রান্ত করে।

ডিইউজের নির্বাচনে পরাজয়ের ঘটনায় কেন্দ্র করে আমি সংগঠনে আরও মনোযোগী হই। আমার বিশ্বাস আমার ঐ পরাজয় আমার বন্ধুমহল এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সকল স্তরের সদস্যরা মেনে নিতে পারে না। আমার পরাজয়ের কারনে অনেক সাংবাদিক বন্ধুকে আমি নিরবে নিভূতে কাঁদতে দেখেছি।
বন্ধু মহলের অনুরোধ, আর সাংবাদিক সমাজের নিঃস্বার্থ ভালবাসার অনুরোধে আমি ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করি। ঐ নির্বাচনে আমি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ইতিহাসের সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই।
নির্বাচিত হওয়ার পর আমার এ বিজয়কে আমি সাধারণ সদস্যকে উৎসাহ করেছিলাম ভবিষ্যতেও আমার পথ চলার এবং কাজের অনুপ্রেরণা এই সাধারণ সদস্যরাই।

যতদিন সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন আমি সাংবাদিকতার পাশে থেকে কাজ করে যাব এই প্রত্যাশা সকলের কাছে।
সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বিভক্তি প্রসঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের এই বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছিল ২০ বছর পূর্বে। একই পেশায় থেকে সাংবাদিক সমাজের এই বিভক্তি কারওই কাম্য নয়। সাংবাদিকদের মধ্যে আহমিক দ্বন্ধ থাকতে পারে, মতের বিরোধ থাকতে পারে এটা আমি শিকার করি। তবে পেশাগত অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই প্রয়োজন। তবে আমি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকাকালে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ব্যানারে আনার ব্যাপারে সকলের পরামর্শ নিয়ে কাজ করব। তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করছেন সাংবাদিক দীনেশ দাস, বিভাষ সাহার আকস্মিক মৃত্যু সাংবাদিক  দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিভক্তি ভুলে গিয়ে এক কাতারে থেকে আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহজত থাকবে এবং এই আন্দোলনৈর সূত্র ধরেই সাংবাদিক সমাজ আবার এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ হবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

শহর সাংবাদিকতা এবং গ্রামীন সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে এই সাংবাদিক নেতা বলেন,  শহর আর গ্রাম নয় আমরা যারা সংবাদ সংগ্রহে কাজ করি সবাই-সাংবাদিক। তবে শহরের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে গ্রামীন জনপদে কর্মরত সাংবাদিকদের। পেশাগত দায়িত্ব পালনে ভূমিকা বেশী। কারণ শহরে কেউ কারও তেমন খবর রাখে না। কারও  বিরুদ্ধে সংসাদ প্রকাশিত হলে তারা প্রেস কাউন্সিল অথবা আদালতের আশ্রয় নেয়। গ্রামে কিন্তু প্রেক্ষাপট ভিন্ন। যদি কোন রাজনৈতিক নেতা কর্মী অথবা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি তখনি একজন কর্মচারীর দুর্নীতি নিয়ে গ্রামীণ সাংবাদিকতার সংবাদ পরিবেশন করে তাহলে প্রকাশ্য দিবালোকেই তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। লক্ষ্য করা গেছে শহরের সাংবাদিকদের থেকে গ্রামীণ সাংবাদিকরা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয় অনেক বেশি।

মফস্বল সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আনার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে শাবান মাহমুদ জানান, আসলে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মফস্বল সাংবাদিকদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তবে এ ব্যাপারে আমরা মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য সচিবের সাথে আলাপ করেছি। তারা আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে মফস্বল সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের আওতায় এনে সকল সুবিধা প্রদান করা হবে।  তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের একটি খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছে। ঐ খসড়া নীতিমালা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। অনলাইনের লাইসেন্স ফি কি কারনে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে তা আমাদের কারওই বোধগম্য নয়।  তবে এ ব্যাপারেও আমরা মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তিনি এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারীরা পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় নারীদের অংশগ্রহনের বিষয়টি নতুন নয়। এটা অনেক পূর্ব থেকেই ছিল তবে এখন অনেকটা বেড়েছে। আসলে আধুনিক এ যুগে নারী পুরুষকে আলাদা করে দেখা একটি লজ্জাজনক বিষয়।  তিনি আরো বলেন, বর্তমানে লক্ষ্য করা গেছে রিপোর্টিং এর পাশাপাশি ফটো সাংবাদিকতায় আসছে। এতে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনী গণমাধ্যমের গুরুত্ব সমাজে অনেকাংশে বাড়বে। শাবান মাহমুদ জানান, আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আমি অনেকবার বিদেশে গিয়েছি। সেখানেও গণমাধ্যমে নারীদের  অংশগ্রহন দেখেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে বাংলাদেশে অনেকে এ বিষয়টি নিয়ে হীনমণ্যতায় ভোগে।

এখান থেকে সরে এসে নারীদের গণমাধ্যমে আসার জন্য আরও উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শাবান মাহমুদ বহু দেশ ভ্রমন করেছেন। অষ্ট্রেলিয়া, চীন, ইংল্যান্ড, লন্ডন, ফিলিপাইনসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ঘুরে বেড়িয়েছেন।  বিদেশের সাংবাদিকতা ও বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মধ্যে তিনি বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন।  তিনি বলেন, বিদেশের বেশীরভাগ সাংবাদিক উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। পেশার দিক থেকেও তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী যত�শীল। তবে বাংলাদেশের মত বিদেশেও সাংবাদিকদের ঝুকির মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

নিউজরুম

 

শেয়ার করুন