প্রিয় বিশ্বজিৎ,
তোমাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করলাম বলে কি অবাক হচ্ছো? অবাক হওয়ার কিছু নেই, মৃত ব্যক্তিরা সবসময়ই আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। তরতাজা তরুণের চেয়ে প্রাণহীন দেহ আমাদের কাছে অনেক বেশি দামি, প্রয়োজনও বটে। মৃতদেহ ছাড়া আমাদের রাজনীতি, মিডিয়া কিছুই যেন জমে না।
সেজন্যই তো মানুষরূপী ক’জন রক্তপিপাসু হায়েনা যখন তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমরা কেউই এগিয়ে যাই না, তবে চুপচাপ দাঁড়িয়েও থাকি না, মৃত্যুচিত্রটি ঠিকই ধারণ করি, আমাদের কাজে লাগবে যে ….
আমাদের কথা বাদ দাও, তোমার কথা বল, কেমন আছো? যদিও এ প্রশ্নটা এখন যৌক্তিক নয়। তাতে কি? অযৌক্তিকতাতো আমাদের রক্তে মিশে আছে। তোমার মৃত্যুই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
তুমি হয়ত একটু বিরক্ত হচ্ছো, এই ভেবে যে, তোমার ইস্যুটা এখন বেশ পুরনো হয়ে গেছে, আর লেখালেখিও হয়ে গেছে অনেক বেশি। আমি তোমাকে কোনদিনও এ চিঠি লিখতাম না, যদি তোমার মৃত্যু আমার জীবনে একটি সামান্য পরিবর্তন না আনতো। কি পরিবর্তন সেটা একটু পরে বলছি। কারণ, আমি এ নিয়ে এটকু রহস্য তৈরি করতে চাইছি।
তোমার মৃত্যু নিয়ে যেমনটা তৈরি করেছে আমাদের সরকার আর পুলিশ প্রশাসন। তোমার খুনিদের নাকি এখনো চেনা যাচ্ছে না। অথচ পত্রিকা খুললেই পিশাচগুলোর নোংরা মুখ পরিষ্কার চেনা যাচ্ছে। এটি তো সরকারের রহস্য প্রীতিরই প্রমাণ। এ দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে সরকারকে অনুসরণ করাটাই সবচে’ ভাল বলে মনে করি।
আমি হয়ত অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছি। তুমি হয়ত বিরক্ত হচ্ছো, আমিও একজন মৃত্য ব্যক্তিকে বিরক্ত করতে চাই না, কিন্তু কি করব বলো, তোমার মৃত্যু যে আমার পাঁচ বছরের ছেলের জীবনে বড় এক পরিবরর্তন এনে দিয়েছে।
এতোদিন আমার ছেলের প্রিয় খেলা ছিলো হরতালে গাড়িতে আগুন দেওয়া। তুমি মারা যাওয়ার একদিন আগেও ও এভাবেই খেলতো, সে খেলায় একমাত্র সঙ্গী হতাম আমি। আজ ওর প্রিয় খেলা, হরতালে লোক মারা। কিন্তু এ খেলায় সে আমাকে কিছু্তেই নিতে রাজি না। শিশুটিও বুঝে গেছে, মা কখনো লোক মারে না।
যাকগে সেসব কথা, আমি এখন উঠবো। তোমাকে লেখা এটাই আমার শেষ চিঠি, কারণ, এরপর আমার ছেলে হয়তো হরতালের নতুন কোন খেলা শিখে যাবে।
পরিশেষে শুধু এটুকুই আশা রাখি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একজন মা। উনি তোমার মা’র সন্তান হারানোর ব্যথা নিশ্চয়ই বুঝবেন, তোমার হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখী করবেন।
তোমার আত্মা শান্তিতে থাক।
ইতি
তোমার এক হতভাগ্য বোন