রুপসীবাংলা, ঢাকা (১১ ডিসেম্বর) : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকা মঙ্গলবারের হরতালে রাজপথ দখলে রেখেছে মূলত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের কোনো উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বিএনপির অন্যতম শরিক জামায়াত নিজেদের ডাকা হরতালে মাঠে থাকলেও মঙ্গলবার তাদের তেমন কোনো উপস্থিতি ছিল না।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম অন্য সংগঠনগুলো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করছে। সরকার সমর্থকদের মিছিলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, দৈনিক বাংলার মোড়, ফকিরাপুল, জাতীয় প্রেসক্লাব, মতিঝিল, টিকাটুলী, জিরো পয়েন্ট, শাহবাগ, মালিবাগ, মগবাজার, খিঁলগাও, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, শ্যামপুরসহ মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড এখন মুখরিত। এর বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কোনো উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
হরতালের আগের দিনই সরকারি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ঘোষণা দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার হরতালের দিনে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে রাজপথ দখলে রাখবেন তারা। তার ঘোষণা অনুযায়ী হরতালের রাজপথ এখন পর্যন্ত সরকারি দলের দখলেই রয়েছে। সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে রাজপথে তাদের উপস্থিতির জানান দেন। সেই সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগ মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে তাদের শক্তি প্রদর্শন করে।
বিরোধী দলের সমর্থকরা বিচ্ছিন্নভাবে রাজধানীতে কয়েকটি জায়গায় মিছিল বের করলেও পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যান। এর মধ্যে ইত্তেফাক মোড়ে স্বেচ্ছাসেবক দল ছোট একটি মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দেয়। এছাড়া খাদ্য সচিবের গাড়িতে ঢিল ছোঁড়েন হরতাল সমর্থকরা। এ ঘটনায় পুলিশ অন্ততপক্ষে ৬ জনকে আটক করে। এর বাইরে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরোধী দলের তেমন কোনো সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি।
মূলত আওয়ামী লীগের সরব উপস্থিতির কারণে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হওয়ার পর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যেভাবে কঠোর হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে সে চিত্র এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলো থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা এখানে জড়ো হন। আবার মিছিল করতে করতে অনেকে আবার নিজ নিজ এলাকায় চলে যান।
এখানে হরতাল বিরোধী মিছিল-সমাবেশ করতে কয়েকশ’ নেতাকর্মী জড়ো হন। এ সময় তারা হরতাল বিরোধী ও জামায়াত-শিবির বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
সেখানে হরতাল বিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বেলা ২টার দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে হরতাল বিরোধী মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা করা হয়। তবে নেতাকর্মীদের এখনও সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসব মিছিল-সমাবেশে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, মহানগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
এছাড়া যুবলীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আশেপাশে শক্ত অবস্থানে থাকা নেতাকর্মীরা জানান, ‘‘দুপুরে পর যেন বিএনপি-জামায়াত রাজধানীতে কোনো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আমরা এখান থেকে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি করছি।’’
নিউজরুম