রুপসীবাংলা, ঢাকা (১১ ডিসেম্বর) : প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে গিয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেইক।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে আটটায় হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ পরামর্শ দেন।
এ সময় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতারও নিন্দা জানান ব্লেইক।
তিনি বলেন, “বর্তমান সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক সঙ্গে বসে যে সিদ্ধান্ত নেবে আর্ন্তজাতিক মহল তা মেনে নেবে।”
“বর্তমান পরিস্থিতি থেকে সমাধান খুজেঁ বের করতে সংলাপকেই যুক্তরাষ্ট্র জোরালোভাবে সমর্থন করে” জানিয়ে ব্লেইক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলই সংলাপের মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণের শান্তিপূর্ণ উপায় বের করুক। তাই বিএনপির উচিত সংসদে ফিরে যাওয়া। তারা আইনগত সমস্যাগুলো সংসদে উত্থাপন করুক।”
“বিরোধীদলের ডাকা সাম্প্রতিক হরতালের সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন” মন্তব্য করে ব্লেইক বলেন, “আমরা আহ্বান করি দুই পক্ষই সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় বের করবে।”
আগামী নির্বাচন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উচিত একত্রে মিলে এ বিষয়টির সমাধান করা। সংলাপের মাধ্যমে দুই দল এ বিষয়ে যে সমাধান বের করবে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মর্মে বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্লেইক এর সত্যতা অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, “এটি পুরোপুরি বাংলাদেশের বিচারিক বিষয়। সাংবিধানিক অধিকার এক্ষেত্রে পালিত হবে বলে আশা করি। অন্যদিকে আমি সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় তিনজনের মৃত্যতে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমি সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি একজন যুবককে কয়েকজন মিলে পিটিয়ে ( কুপিয়ে) হত্যা করছে। এটি অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা।”
এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
হরতালের সমালোচনা করে ব্লেইক বলেন, “হরতালের ফলে খুবই ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এর ফলে মানুষ তার জীবিকা হারায়। তারপরও সবচেয়ে বড় কথা হলো বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীরা দেখতে চায় গ্রহণযোগ্য নিরাপদ ও সহজসাধ্য কাজের পরিবেশ। হরতাল নতুন পর্যটক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য সংকট সৃষ্টি করে। দুই পক্ষের উচিৎ হরতাল পরিহার করা এবং সংসদে গিয়ে সংকটের সমাধান করা।”
ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ব্লেইক বলেন, “আমরা দুই দেশ এ চুক্তি সম্পাদনের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছি। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। বাংলাদেশকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এ চুক্তিটি দুই দেশে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সচেতন রয়েছে” জানিয়ে ব্লেইক বলেন, “টিফকা চুক্তি হলে এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার আরো প্রসারিত হবে।”
এ সময় অতীত স্মরণ করে ব্লেইক বলেন, “প্রায় ১১০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে একটি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৪৫ জন শ্রমিক নিহত হয়। তারপরই শ্রমিকদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয় তাতে শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা পায়। আশা করি তাজরীন গার্মেন্টসের ঘটনাও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় মাইলফলক হবে।”
“সম্প্রতি তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা নিয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিলে তা বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে আরো ভাল ফল বয়ে আনবে” বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্লেইক।
“যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ” জানিয়ে তিনি বলেন, “আফগানিস্তান থেকে শুরু করে যে নতুন সিল্ক রোডের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র করেছে তার সংযোগ হলো বাংলাদেশ। মিয়ানমারের উন্মুক্ততার সুযোগ নিয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত যোগাযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশের বিশাল ভূমিকা থাকবে।”
মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথোপকথন নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্লেইক বলেন, “সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে এ আদালত সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মান রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, এই আদালত বাংলাদেশে যেন পুরোপুরি আইন সম্মতভাবে সঠিক পথে চলে। এই আদালত স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে সকল প্রকার সহযোগিতা পাবে। এতে যেন দোষীরা ন্যায়বিচার পায় এবং রায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়।”
নিউজরুম