রুপসীবাংলা, অর্থনীতি ডেস্ক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দুটি ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ কিনতে সরকারকে ৯৪০ কোটি টাকা (১১৮ মিলিয়ন ডলার) ঋণ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিগতভাবে বেশ আগে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিলেও দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে ছিলো। অবশেষে গত সপ্তাহে অর্থায়নের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চূড়ান্ত করে এবং বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ করে।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থায়নে গেলো। এর ফলে আগামী ২০১৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে বিমানের বহরে নতুন দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সূর চৌধুরি বলেন, বিমানের ১১৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে সে মোতাবেক সম্প্রতি আমরা এর অর্থ পরিশোধ করেছি। সোনালী ব্যাংক এর যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিনিয়োগ করল। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সাথে বৈঠকও করেন। এব্যাপারে তিনি গভর্নরের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বলেও জানায় সূত্র।
সূত্র মতে, গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে এই অর্থ ছাড়ের কথা ছিলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বর্ধিত ঋণ সুবিধার দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় না হওয়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়টিও ঝুলে যায়। কারণ রিজার্ভ থেকে এভবে বিনিয়োগের বিপক্ষে আইএমএফ। ফলে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটি তার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আটকে দিতে পারে। যদিও তা অনেকটা আটকেই আছে। অক্টোবর মাসে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা ছিলো। কিন্তু নানা শর্তের কারণে তা এখনও পায়নি বাংলাদেশ।
অবশ্য অর্থ মন্ত্রী একাধিকবার বলেছিলেন, নভেম্বরের মধ্যে এই অর্থ পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি।
আইএমএফ এর এমন সিদ্ধান্তের কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক আর বসে না থেকে সরকারের অর্থের যোগান দিলো।
সূত্র মতে, এর আগে সোনালী ব্যাংক এই অর্থের যোগান দিতে সম্মত হয়েছিলো। কিন্তু হলমার্ক কেলেংকারির পর সোনালী ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং সোনালী ব্যাংকের সাথে অন্য ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের অনাগ্রহের কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই এ অর্থায়ন করতে এগিয়ে গেলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এ অর্থ সোনালী ব্যাংক যুক্তরাজ্য শাখার মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।
জানা যায়, সিন্ডিকেশন অর্থায়ন ব্যবস্থায় বিমানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ৫৯০ মিলিয়ন ডলারে দুটি ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ কেনার কথা। এ জন্য ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রি-ডেলিভারি পেমেন্ট বাবদ মোট ক্রয়মূল্যের ২০ শতাংশ বা ১১৮ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
জানা যায়, এ অর্থায়নে পুরোটাই সোনালী ব্যাংক করার কথা ছিলো। পরে চলতি বছরের ৩০ জুলাই সোনালী ব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদিত ঋণটি তারল্য সংকটের কারণে বাতিল করা হয়। ফলে বিষয়টি ঝুলে যায়। গত মাসের প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সূর চৌধুরীর সভাপতিত্বে ২২টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। এ সময় বিমান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র মতে, বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকের নেতৃত্বে ২২টি ব্যাংক ৬০ মিলিয়ন ডলার এবং সোনালী ব্যাংক যুক্তরাজ্য শাখা অবশিষ্ট ৫৮ মিলিয়ন ডলার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলো। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিজস্ব তহবিল থেকে এই অর্থ বিনিয়োগ করল। লাইবর প্লাস সুদের হার অর্থাৎ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে এই বিনিয়োগ করল বাংলাদেশ ব্যাংক। যেটি সরকার দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধ করতে পারবে।
আপলোড, ১১ ডিসেম্বর, ২০১২