রুপসীবাংলা, ঢাকা (১০ ডিসেম্বর) : অন্যসব দিনের মতোই রোববার জীবিকার তাগিদে বেরিয়েছিলেন পূরাণ ঢাকার দর্জির দোকানি বিশ্বজিৎ দাস। গন্তব্য ১২৩ শাঁখারিবাজার ‘আমন্ত্রণ টেইলার্স’। সকাল ৯টায় হঠাৎ পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে অবরোধকারী ও বিরোধীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়লেন। শেষ রক্ষা হলো না। সহিংস রাজনীতির বলি হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
ঠিক এমনই সহিংস রাজনীতির শিকার হয়েছেন বদর আলী। হরতালের আগেরদিন ২১ এপ্রিল রাজধানীর খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালের সামনে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। ওই গাড়ির ভেতর থেকেই উদ্ধার করা হয় গাড়িচালক বদরের মৃতদেহ।
বিশ্বজিৎ, বদর আলীর মতো সহিংস রাজনীতির বলি হয়েছেন অনেকেই। যারা কোনো দলের নেতাকর্মী না হলেও রাজনীতির চাকায় পিষ্ঠ হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। প্রতিবছরই শান্তির ঢাক নিয়ে আসে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। কিন্তু মানবাধিকারের বাণী যেনো নিভৃতেই কাঁদে। শুধুই বক্তৃতা, সেমিনারে শোনা যায় মানবাধিকারের কথা।
১০ ডিসেম্বর সোমবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এবারের মানবাধিকার দিবস পরেছে ঠিক এমনই একদিন যার আগের দিনটি ছিল বিরোধী দলের অবরোধ আর পরের দিন থাকছে হরতাল। এইরকম সহিংস রাজনীতির মাঝেই এবার পালিত হচ্ছে মানবাধিকার দিবস।
মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশন’র চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, “সহিংস রাজনীতির শিকার হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। রাজনীতির চাকায় পিষ্ঠ হচ্ছে মানবাধিকার। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় আলোচনাই পারে সুন্দর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে।”
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন হয়েছেন ১১ নেতাকর্মী। সারাদেশে ৪৬ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে ১৬ নারীকে। র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৩ ব্যক্তি।
অধিকারের গতমাসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নাগরিকের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা এবং অপর দুইজন কথিত অপরাধী। নভেম্বর মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৮ জন। বিএসএফ ১ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে। বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছেন ৬ বাংলাদেশি। এছাড়া ৬ বাংলাদেশিকে অপহরণ করে নির্যাতন করার ঘটনাও ঘটেছে।
মালালার জন্য উৎসর্গ
জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘মালালার পক্ষে সোচ্চার হও, কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হও।’ এবারের দিবসটি মালালা ইউসুফজাইকে উৎসর্গ করেছে জাতিসংঘ।
পাকিস্তানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তালেবানরা। এ সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি ১৫ বছরের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। ‘তাই বলে স্কুলে যাব না?’ এমন প্রশ্ন রেখে তালেবানদের সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করে জনমত সৃষ্টির চেষ্টায় উর্দুতে ব্লগ লেখা শুরু করে সে। মালালার সেই লেখা ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারাবিশ্বে আলোচিত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তালেবানরা তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১০ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পথে তালেবানদের গুলিতে গুরুতর আহত হয় সে। এ ঘটনায় সারাবিশ্ব তার পক্ষ নেয়।
মানুষের প্রতি সহমর্মিতা এবং মানবতাবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে ঘোষিত হয় সার্বজনীন মানবাধিকার দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ দূর করার লক্ষ্যে মানবাধিকার দিবস ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উৎযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- র্যালি, মানববন্ধন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা ও স্মরণিকা প্রকাশ। এছাড়াও রয়েছে রক্তদান কর্মসূচি, রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
নিউজরুম