রুপসীবাংলা, স্পোর্টস ডেস্ক: বাঙালি জাতির নতুন কিছু অর্জন মানেই পুরো জাতির বাঁধভাঙা বিজয়োল্লাস। পরাধীনতা শৃঙ্খল ভেঙে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বরে একসঙ্গে পুরো জাতি আনন্দে মেতে উঠেছিলো, তার থেকে বড় কোন আনন্দ উল্লাস জাতি দেখেছে বলে মনে হয় না।
তবে সেই আনন্দ এখনকার তরুণ সমাজ দেখেনি। সুতরাং নানা সমস্যায় জর্জরিত এ জাতি যখনই নতুন কিছু অর্জন করে তখন তরুণ আর প্রবীণদের আনন্দে একাকার হয়ে যায়। যদি বিজয়ের মাসে সে রকম কোন অর্জন জাতির সামনে আসে তাহলে তো আর কথাই নেই। দলমত নির্বিশেষে মানুষ এক সঙ্গে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক।
শনিবার বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে জাতি তেমনই একটা উপলক্ষ পেলো। আর ক’দিন পরেই বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপিত হবে, তার আগেই এত বড় বিজয় আরেকবার বিজয়োল্লাসে ভাসিয়েছে জাতিকে।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যতটুকু সাফল্য তা ক্রিকেটকে ঘিরেই। `৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ে বাঙালি জাতি আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলো। বিশ্বকাপের মত বড় আসরে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেশের জন্য বয়ে এনেছিল বিরল সন্মান। অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর প্রমাণ করেছে ক্রিকেটের আগামী পরাশক্তি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতাতেই ক্রিকেটে আমাদের অনেক জয় এনে দিয়েছে।
কিন্তু রোববারের বিজয় বাংলাদেশের অন্যান্য বিজয়ের থেকে আলাদা। সদ্য সমাপ্ত টি ২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এক সময়ের ক্রিকেটে পরাশক্তি ওয়েন্ট ইন্ডিজকে ৫ ম্যাচ সিরিজে ৩-২ হারিয়ে সিরিজ জেতা চাট্টিখানি কথা নয়।
এতেই আরেকবার আনন্দে মেতে উঠে পুরো জাতি। আর স্টেডিয়ামে বসে এই বিজয়ের ৪০ হাজার দর্শকের সাথে শরিক হলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছিলো একেবারে ব্যালান্সড একটি টিম। ক্রিস গেইল, পোলার্ড, স্যামুয়েলস, ড্যারেন সামিসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা ক্রিকেটাররা ছিলেন এই টিমে।
সিরিজের শুরুতে খুলনায় পরপর দুই ম্যাচে জয়ের আনন্দ উপভোগ করে জাতি। কিন্তু অপেক্ষা ছিল সিরিজ জয়ের। ঢাকায় এসে পরপর দুই ম্যাচ জয়ের কাছাকাছি গিয়ে ফেরত আসতে হয়। আর তৃতীয় ম্যাচ হয়ে যায় অঘোষিত ফাইনাল। সিরিজ জয়ের টান টান উত্তেজনা নিয়ে মাঠে খেলোয়াড়দের উৎসাহ জোগাতে হাজির হয় প্রায় ৪০ হাজার দর্শক। শেষ বিকেলে যখন ম্যাচ উত্তেজনায় ভরপুর তখন আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
২১৮ রানের মামুলি টার্গেটে যখন বাংলাদেশ ব্যাট করে তখন একবার মনে হচ্ছিল এই রান-ই কতইনা দূর। কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তার কারণে তা সম্ভব হয়েছে। ম্যাচ শেষের দিকে যখন পর পর দুই উইকেটের পতন ঘটলো তখন আশার প্রদীপ কিছুটা ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা আজ যে বাংলাদেশের সঙ্গে আছেন তা নাসিরের বাউন্ডারির ফলে বোঝা গেল। নাসিরের বাউন্ডারির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজেই যখন লাফিয়ে উঠলেন তখন আর কেউ কি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
এমনিতেই সিডর, আইলার মতো ভয়াবহ ঝড়-ঝাপটা মোকাবেলা করা বাঙালি জাতি আনন্দ-উল্লাস করার উপলক্ষ পায় না। সেখানে সিরিজ জয়ের আনন্দ কি চেপে ধরে রাখবে, তা কি কখনো হয়? সাথে গ্যালারি ভর্তি দর্শক আর রেডিও -টেলিভিশনে খেলা উপভোগ করা লক্ষ মানুষ আনন্দে মতে উঠেন।
বাংলাদেশের জয়ের সাথে সাথে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা বয়সের শ্রেণী পেশার মানুষের ব্যাপক আনন্দ উল্লাস লক্ষ করা গেছে। টিএসসিতে গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্রদের পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের আনন্দ উল্লাস লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর রাস্তাগুলোতে আনন্দ মিছিল বের করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। শুধু রাজধানীই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল বের করে উল্লাস প্রকাশ করেন ক্রিকেট ভক্তরা।
আপলোড, ০৯ ডিসেম্বর, নিউজরুম