রুপসীবাংলা, ময়মনসিংহ (০৫ ডিসেম্বর) : ময়মনসিংহের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুরুজ্জামান সরকারের ছেলে গোলাম মাসুম সরকারের (৪৮) কফিনে মোড়ানো নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদলেন দ্বিতীয় স্ত্রী নিগার সরকার ও ৮ বছরের শিশু পুত্র ইফতেকার জামান সরকার অমিত।
শহরের নাটক গোর্লেন রোডে অবস্থিত ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের সংসদ সদস্য মতিউর রহমানের বাসভবনে বাবাকে শেষবারের মতো দেখেন অমিত ও তার মা নিগার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাসুমের স্ত্রী-পুত্রের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে সেখানকার বাতাস।
শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবার গোলাম মাসুমদের বাড়ি ময়মনসিংহের আকুয়া মোড়লপাড়ায়। গত সোমবার হঠাৎ করে তার মৃত্যু হয়। এখবর পেয়ে ঢাকা থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিগার সরকার শিশুপুত্র অমিতসহ ময়মনসিংহ ছুটে আসেন। কিন্তু সেখানে অবস্থানরত তার প্রথম স্ত্রী ও স্বজনরা নিগার ও তার পুত্রকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি। জানা গেছে, মাসুম সরকার নিগারকে বিয়ে করার বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। শহরের বনেদি পরিবার হিসেবে খ্যাত ব্যবসায়ী সুরুজ্জামানের জন্য বিষয়টি খুব বিব্রতকর হয়ে দেখা দেয়।
এ অবস্থায় নিগার এসপি বরাবর আবেদন করেন। একই সময়ে ঢাকা থেকে সরকারদলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির ফোনও আসে স্থানীয় এমপির কাছেও। অবশ্য এর আগে ঘটে যায় নানা নাটকীয়তা। অবশেষে ময়মনসিংহ সদর আসনের বর্ষীয়াণ সংসদ সদস্য প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার গোলাম কিবরিয়ার হস্তক্ষেপে প্রয়াত মাসুম সরকারকে শেষ দেখার সুযোগ হয় দ্বিতীয় স্ত্রী নিগার সরকার ও ছেলে অমিতের। মাসুমের লাশ এমপির বাড়িতে এনে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও পুত্রকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।
শিশু অমিতের প্রশ্নে আবেগাপ্লুত এসপি
জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্বামীর লাশ দেখার আবেদন জানিয়ে নিগার সরকার বলেন, “২০০২ সালের ২৩ অক্টোবর রেজিস্ট্রি কাবিননামা মূলে গোলাম মাসুম সরকারের সাথে আমার বিয়ে হয়। এরপর ঘর আলো করে আসে ফুটফুটে পুত্র সন্তান অমিত।”
সোমবার স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা থেকে পাগল প্রায় নিগার ও শিশু পুত্র অমিত ছুটে আসেন ময়মনসিংহে। কিন্তু সেখানে ঘটে নানা প্রতিবন্ধকতা।
পরে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম কিবরিয়ার সাথে দেখা করেন প্রয়াত মাসুম সরকারের স্ত্রী নিগার সরকার ও পুত্র অমিত। এসময় ৮ বছরের শিশু আকুতি ভরা কন্ঠে জেলা পুলিশ সুপারকে বলে, “এসপি আঙ্কেল, আমি কী আমার পাপ্পার মুখ দেখতে পাবো না? আমার মতো যদি আপনারও একটি ছেলে থাকতো তাহলে সে কী তার বাবাকে মাটি দিতো না!” এসময় জেলা পুলিশ সুপার আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেন।
পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদরের বর্ষীয়াণ সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে কফিনে মোড়ানো স্বামীর মুখ দেখতে পান নিগার ও সন্তান অমিত।
মরহুম মাসুম সরকারের স্ত্রী নিগার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কোনো সহযোগিতা চাই না। শুধু আমি ও আমার ছেলের সামাজিক স্বীকৃতি চাই। আমার স্বামীর জন্য দোয়া চাই।”
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ময়মনসিংহ শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুরুজ্জামানের ছেলে গোলাম মাসুম সরকার।
মঙ্গলবার বাদ আছর শহরের বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে ও বাদ মাগরিব আকুয়া মোড়লবাড়ি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে মঙ্গলবার রাতে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
নিউজরুম