রুপসীবাংলা, রাজশাহী (০৪ ডিসেম্বর) : বিনোদপুরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। হরতালে শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে গোটা শহর জুড়ে।
প্রধান সড়কগুলোতে পিকেটারদের দেখা না গেলেও তাদের মনে ভীতি সঞ্চার করতে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। হরতালে যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে ভোর থেকেই শহরজুড়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে মহানগর ঘুরে কোথাও হরতাল সমর্থকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া চোখে পড়েনি পিকেটিংও।
মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে ঘিরে রাজশাহীজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে। ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরু হলেও ৫টা থেকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মহানগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, মণিচত্বর, কুমারপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয় এলাকা, সোনাদিঘীর মোড়, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, তালাইমারী, বিনোদপুর, কাটাখালি, ভদ্রা স্মৃতি অম্লান মোড়, কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বাস টার্মিনাল, লক্ষীপুর, কোর্ট চত্বর, শালবাগান, নওদাপাড়াসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বর্তমানে গোটা মহানগীরতে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রয়েছে বলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) উপ-কমিশনার (সদর) মোর্শেদুল আনোয়ার খান মঙ্গলবার সকালে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
এদিকে, রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূর পাল্লার বা আন্তঃজেলা রুটের কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। পুলিশে বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও চলাচল করেনি বিআরটিসি বাস।
তবে রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে সকালে খুলনাগামী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। এছাড়া ভারি যানবহন চলাচল না করলেও মহানগর এলাকায় রিকশা-ভ্যান, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, বাই-সাইকেলসহ হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নগর ভবন, রাজশাহী রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, চেম্বার ও রেলভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত টহল দিচ্ছে র্যাব।
এর আগে সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিনোদপুর এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করাকে কেন্দ্র করে শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হরতালের সমর্থনে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোর সাড়ে ৬টা থেকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কয়েকটি ককটেল বিস্ফারণ ঘটিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করে।
পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ওই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ২ শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানাউল হক।
বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশঙ্কায় মহানগর জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ মহানগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশী চালাচ্ছে।
নিউজরুম