রুপসীবাংলা, ঢাকা (০৪ ডিসেম্বর) : দাতা গোষ্ঠীর অর্থায়নের বিলম্বের কারণে চলতি মেয়াদে ডিজিটাল সংসদে রূপান্তরিত হচ্ছে না জাতীয় সংসদ। কোরিয়ান দাতা সংস্থা কোইকার ‘ই-পার্লামেন্ট’ প্রকল্পে অর্থায়ন করার কথা থাকলেও ২০১৩ ও ২০১৪ সালের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি।
এর ফলে চলতি নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদে অধিবেশন কক্ষকে ‘ডিজিটাল প্ল্যানারি চেম্বার’ তৈরিসহ ই-পার্লামেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী কার্যত ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবরই নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পের মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ধরা হয়েছিলো ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বাকিটা কোরিয়ান সংস্থা কোইকা’র অনুদান হিসেবে দেওয়ার কথা ছিলো। তবে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের কোইকা’র বাজেটে এ প্রকল্পে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। আর এ প্রকল্প কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়েও সংসদ সচিবালয়কে কোনো কিছু জানয়নি কোইকা।
এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দিক থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার সব প্রস্তুতি ছিলো। কিন্তু অর্থায়নের কারণে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘কোইকা’র আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সচিবালয় কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছিলো। আশা করছি, কোইকা আগামীতে প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেবে।’’
সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, ‘ই-পার্লামেন্ট’ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোইকা’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন কোইকা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী দুই বছরে বাজেটে ডিজিটাল পার্লামেন্ট প্রকল্পে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। যদিও কোইকা’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ সচিবালয়কে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
সংসদ সচিবালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উন্নয়নে কিছু প্রকল্পে কোইকা’র অর্থ বরাদ্দের কারণে সংসদে আগামী দুই বছর বরাদ্দ রাখা হয়নি। ২০১৪ সালের পর এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
এদিকে ‘ই-পার্লামেন্ট’ প্রকল্পের অধীনে কিছু কাজ এখন জিওবি অর্থায়নে (সরকারি) শুরু করেছে সংসদ সচিবালয়। এর মধ্যে আগামী ২৫ জানুয়ারি সংসদের চার বছর পূর্তির আগেই এমপিদের জন্য ল্যাপটপ ও মডেম কেনা হবে। এছাড়া গত ১৩তম অধিবেশনেই সংসদ কক্ষসহ সবগুলো লবিতে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংসদকে ই-পার্লামেন্টে রূপান্তরের লক্ষ্যেই পৌনে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিলো। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবার প্রকল্প প্রস্তাব করার সময় এর বাজেট রাখা হয় ২৭ কোটি টাকা। বিধি অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার ওপরে গেলেই প্রকল্প পাসের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠাতে হয়। তবে প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়নের জন্য বাজেট দুই বার সংশোধন করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কোইকা কবে নাগাদ অনুদান দেবে তা জানতে চেয়ে সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছিলো পরিকল্পনা কমিশন।
জানা গেছে, অধিবেশন কক্ষকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের আসনে ল্যাপটপ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। চালু করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি। সব সংসদীয় বির্তক ডাটা-বেজে সংরক্ষণ এবং প্রশ্নোত্তর, নোটিশসহ দিনের কার্যসূচি সব কিছুই থাকবে ল্যাপটপে। জনসংযোগসহ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ওয়েবসাইটে আলাদা বøগ তৈরি করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিট্যাল কক্ষ বা ডিজিট্যাল প্ল্যানারি চেম্বার করার জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি চালু করা হবে। সংসদের বিগত দিনের সমস্ত বির্তক একটি শক্তিশালী ডাটা-বেজে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে কোনো সংসদ সদস্য যেকোনো সময় অধিবেশন কক্ষে বসেই পুরোনো বিতর্কগুলো দেখে নিতে পারেন।
নিউজরুম